কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।
একটি প্রাথমিক স্কুলে দু’সপ্তাহের মধ্যে পানীয় জলের সংযোগ দিতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনমের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, দু’সপ্তাহের মধ্যে ওই স্কুলে পানীয় জলের সংযোগ দিতে হবে এবং শৌচাগার মেরামত করতে হবে। সেই কাজ যে হয়েছে তার ছবি-সহ রিপোর্ট কোর্টে দিতে হবে।
পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের ওই স্কুলের পড়ুয়াদের পুকুরের জল খেতে হয় বলে অভিযোগ। অভিভাবকদের একাংশের দাবি, আট বছর ধরে এই পরিস্থিতি চলছে। স্থানীয় প্রশাসন, বিডিও, জেলাশাসক— নানা মহলেই বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও সুরাহা না হওয়ায় শেষমেশ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন চন্দন হালদার-সহ কয়েক জন অভিভাবক। তাঁরা কোর্টে দাবি করেন, পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে পুকুরের জল খাওয়ার পাশাপাশি তা দিয়েই মিড-ডে মিল রান্না করা হয়। কোর্টে অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেনি রাজ্য।
রাজ্যের আইনজীবী কোর্টে দাবি করেছিলেন, পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কাজের দরপ্রাপ্ত হয়ে গিয়েছে। শৌচাগারও মেরামত করা হবে। সেই কাজ করতে দু’সপ্তাহের বেশি সময় দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনারা চাইলে ম্যাজিকের মতো দ্রুত কাজ
করতে পারেন।’’
সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের এ হেন অস্বাস্থ্যকর জল খাওয়ার ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করছেন সমাজের অধিকাংশ মানুষ। শিক্ষা মহলের একাংশের মতে, স্কুলে শুধু পড়াশোনা হলেই হয় না। পরিচ্ছন্নতাও জরুরি। কেউ কেউ অবশ্য কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না। তাঁদের প্রশ্ন, একটি প্রাথমিক স্কুলে এ ভাবে দিনের পর দিন অস্বাস্থ্যকর জল খাওয়ানো হলেও তা প্রশাসনের নজরেই এল না কেন?
জয়নগর ২ নম্বর ব্লকের রঘুনাথপুর সর্দার চক প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৩০। স্কুলে নলকূপ থাকলেও তা থেকে জল ওঠে না। ফলে মিড-ডে মিলের রান্না-সহ পড়ুয়াদের পানীয় জল পেতে সমস্যা হয়।
পুকুরের জল ব্যবহার হচ্ছে বলে শুক্রবার মানতে চায়নি প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, স্কুল চত্বরে দু’টি নলকূপ রয়েছে। দু’টি নলকূপেরই জলস্তর নেমে গিয়েছে। তাই কিছুদিন জল উঠছে না। কিছুটা দূরের একটি কল থেকে জল এনে কাজ চালানো হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অজিত নাথ বলেন, “এটা ঠিক, স্কুল চত্বরের কলে জল উঠছে না। তবে পুকুরের জল ব্যবহারের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ৪০-৪৫ মিটার দূরের একটি কল থেকে জল এনে কাজ চালানো হচ্ছে।”
প্রশাসনের দাবি, স্কুল চত্বরে নতুন করে নলকূপ বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। জয়নগর ২-এর বিডিও মনোজিত বসু বলেন, “নলকূপ বসানোর জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।”