এক্রামুল আরও জানান, ২০১৫-য় হাওড়ার জেলা স্কুল পরিদর্শক আরও একটি নির্দেশিকা জারি করে জানান, হায়দর আলির সব নথি ঠিক আছে। তার পরে বিষয়টি স্কুলশিক্ষা অধিকর্তার মাধ্যমে শিক্ষা দফতরের যুগ্মসচিবের কাছে গেলেও সরকার ওই শিক্ষকের প্রাপ্য মেটাতে কোনও পদক্ষেপ করেনি। ২০১৬ সালে হাই কোর্টে মামলা করেন হায়দর আলি।
প্রতীকী ছবি।
তাঁর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও-পার বাংলার। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৪৭ বছর আগে এমএসসি পাশ করার পরে তিনি ভারতের স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ কাল। ২০১৩ সালে হাওড়ার একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরে শেখ হায়দর আলি জানতে পারেন, তিনি পেনশন ও গ্র্যাচুইটি পাবেন না। কারণ, তাঁর বাংলাদেশের ডিগ্রি নিয়ে রাজ্য সরকারের পেনশন দফতর প্রশ্ন তুলেছে। প্রশ্নের উত্তরে ডিগ্রির সার্টিফিকেট যথাযথ উপায়ে যাচাই করিয়ে জমাও দেন তিনি। তবু পেনশন মেলেনি। শেষ পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব ওই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পেনশন চালু করতে হবে। এবং ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ থেকে আট শতাংশ সুদ-সহ মেটাতে হবে তাঁর বকেয়া গ্র্যাচুইটি।
হায়দর আলির আইনজীবী এক্রামুল বারি জানান, ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি পেনশন দফতরের সহকারী অধিকর্তা চিঠি লিখে ওই প্রধান শিক্ষকের ডিগ্রির শংসাপত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার ভিত্তিতে ওই বছরের ডিসেম্বরে হাওড়ার জেলা স্কুল পরিদর্শকও একটি চিঠি দেন। হায়দর আলি ভারত সরকারের নিয়ম মেনেই ১৯৭৫-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাশ করেন। তাঁর শংসাপত্র যাচাই করে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক। সেটি ‘অ্যাটেস্টেড’ করে দেন ভারতীয় হাইকমিশনের কনসুলার।
এক্রামুল আরও জানান, ২০১৫-য় হাওড়ার জেলা স্কুল পরিদর্শক আরও একটি নির্দেশিকা জারি করে জানান, হায়দর আলির সব নথি ঠিক আছে। তার পরে বিষয়টি স্কুলশিক্ষা অধিকর্তার মাধ্যমে শিক্ষা দফতরের যুগ্মসচিবের কাছে গেলেও সরকার ওই শিক্ষকের প্রাপ্য মেটাতে কোনও পদক্ষেপ করেনি। ২০১৬ সালে হাই কোর্টে মামলা করেন হায়দর আলি।
আদালতের খবর, হায়দর আলি ১৯৭৮ সালে চাকরিতে যোগ দেন এবং ১৯৭৯-তে তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়। রাজ্য সরকার তাদের আপত্তি জানানোর সময় ভারত সরকারের একটি নির্দেশিকার উল্লেখ করেছিল। সেই নির্দেশিকা জারি করা হয় ১৯৮২ সালে। তার আগেই এই শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী হওয়ায় ওই সব নির্দেশিকা তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলেই কোর্টে জানান মামলাকারীর আইনজীবী। যদিও নিয়মের যুক্তি দেখিয়ে সরকারি কৌঁসুলি চৈতালি ভট্টাচার্য দাবি করেন, ওই সব নির্দেশিকা এ ক্ষেত্রেও বলবৎ হবে। কারণ, ২০০৬ সালে হায়দর আলিকে চাকরির স্থায়ীকরণ নিয়ে আরও একটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সরকার পক্ষের যুক্তি মানতে চায়নি আদালত। কারণ, মামলাকারী হায়দর আলি শিক্ষকতায় প্রাথমিক ভাবে স্থায়িত্ব পেয়েছিলেন ১৯৭৯ সালেই।