পুরুলিয়ার ঝালদায় পুরসভায় বোর্ড গঠন এবং চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে পুরভোটের পর থেকেই চলছে অশান্তি। প্রতীকী ছবি।
তৃণমূল বা কংগ্রেস— কোনও দলই ঝালদায় তাদের পছন্দের চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে পারবে না। সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট এ ব্যাপারে একটি স্থগিতাদেশ জারি করেছে। তারা জানিয়েছে, আগামী এক মাস ঝালদা পুরসভার যাবতীয় দায়িত্ব সামলাবেন পুরুলিয়ার জেলাশাসকই। ফলে ইতিমধ্যেই জবা মাছোয়ার নামে যে কাউন্সিলরকে চেয়ারপার্সন হিসাবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল, তা কার্যকর হচ্ছে না। একই ভাবে ঝালদা পুরসভায় আস্থাভোটে জয়ী হওয়ার পর যে শীলা চট্টোপাধ্যায়কে পুরপ্রধান হিসাবে মনোনীত করেছিল কংগ্রেস, তিনিও দায়িত্ব নিতে পারবেন না।
ঝালদায় গত ২১ নভেম্বর পুরসভায় আস্থাভোটে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে। অপসারিত হন তৃণমূলের পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল। তার পর থেকেই পুরবোর্ডের প্রধান নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। এরই মধ্যে রবিবার দু’দলের মনোনীত প্রধান জবা এবং শীলা একসঙ্গে ঝালদা পুরসভায় এসে পৌঁছলে ঝালদা নিয়ে ‘নাটক’ নতুন মোড় নেয়। শেষে সমস্যার কথা জানিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা হাই কোর্ট ঝালদা পুরসভা নিয়ে স্থগিতাদেশ জারি করল।
প্রসঙ্গত, ঝালদায় আস্থাভোটে জিতে কংগ্রেস পুরপ্রধান নিয়োগের অনুমতি চাইলে তার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পাল্টা সরকার জানিয়েছিল, যেহেতু পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভায় পুরপ্রধান এবং উপ পুরপ্রধান দু’জনেই পদত্যাগ করেছেন, তাই সেখানে সরকার প্রশাসক নিয়োগ করবে। সোমবার হাই কোর্ট সেই সিদ্ধান্তেই স্থগিতাদেশে দিয়েছে, তারা বলেছে ঝালদায় আপাতত কোনও প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে না সরকার।
তবে স্থগিতাদেশ পেলেও হরেদরে বিষয়টি এক জায়গাতেই রয়ে গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বৃত্তের অনেকে। কারণ অধীর রাজ্যপালকে জানিয়েছিলেন, সরকার যদি প্রশাসক নিয়োগ করে, তবে পুরবোর্ডে আস্থা ভোটে জিতেও কংগ্রেস তাদের প্রাপ্য অধিকার পাবে না। কারণ ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরকারের হাতে বকলমে শাসকদলের হাতেও। পুরসভার দায়িত্ব জেলাশাসক নিলে সেই পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না।
পুরুলিয়ার ঝালদায় পুরসভায় বোর্ড গঠন এবং চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে পুরভোটের পর থেকেই চলছে অশান্তি। পুরভোটে ঝালদায় ১২টি আসনের মধ্যে সমান সমান ফল করেছিল তৃণমূল এবং কংগ্রেস। এর পর থেকেই কোন দল পুরসভায় বোর্ড গঠন করবে, তা নিয়ে শুরু হয় গন্ডগোল। সম্প্রতি তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুরেশ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল কংগ্রেস। তলবি সভায় তারা নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করলে সুরেশ চেয়ারম্যান পদ সরে যান। কিন্তু তার পরও কংগ্রেস ঝালদার পুরবোর্ড গঠনের অনুমতি পায়নি। বদলে সরকারের তরফে শাসকদলের এক কাউন্সিলরকেই প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। সরকারের তরফে এই নিয়োগ হতে চলেছে জানার পরই গত ২৪ নভেম্বর অধীর চিঠি লিখে বিষয়টি জানিয়েছিলেন বাংলার নতুন রাজ্যপালকে। কিন্তু তার পরও তৃণমূল নির্বিঘ্নেই জবা মাছোয়ার নামে দলের এক কাউন্সিলরকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করে। শনিবার সেই নিয়োগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যপালকে আবার চিঠি দিয়ে ঝালদায় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করতে বললেন অধীর।