—ফাইল চিত্র।
এসএসসিতে ২০১৬ সালে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের প্রত্যেককে একটি নোটিস পাঠাতে বলল কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের সমস্ত শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে মোট ২৩ হাজার ৫৪৯ জন কর্মী চাকরি পেয়েছিলেন ২০১৬ সালের এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। হাই কোর্ট জানিয়েছেন তাঁদের সবাইকে এই নোটিস পাঠাতে হবে অবিলম্বে। শুধু তা-ই নয় নোটিস পেয়ে তাতে স্বাক্ষর না করলে চলতি মাসের বেতনই পাবেন না ওই ২৩,৫৪৯ কর্মী।
নোটিসে তাঁদের জানানো হবে ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাটি এখন কলকাতা হাই কোর্টে চলছে। একই সঙ্গে বলা হবে, এই মামলা সম্পর্কে যদি তাঁদের কিছু বলার থাকে, তবে তাঁরা সে কথা আদালতে এসে জানাতে পারেন। কিন্তু হঠাৎ এমন নোটিস কেন?
২০১৬ সালের এসএসসির নিয়োগে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে নবম-দশমে নিয়োগ হয়েছিল ১১, ৫২৫ জনের, একাদশ-দ্বাদশ ৫৫০০ জনের। এছাড়া, গ্রুপ সি-তে ৪৪৮৭ এবং গ্রুপ ডি বিভাগে ২০৩৭ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল । কিন্তু এই নিয়োগেই অনিয়ম হয়েছে জানিয়ে মামলা হয় কলকাতা হাই কোর্টে। অনিয়মের অভিযোগে হাজার হাজার শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিলও করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবারের এই মামলার শুনানি এবং নোটিসের নির্দেশ সেই মামলারই সূত্রে।
তবে মামলাটি এখন আর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে নেই। সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এখন মামলাটির শুনানি চলছে হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে। বুধবার সেখানেই শুনানি ছিল মামলাটির। তিনিই ওই নোটিস পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তবে নোটিস পাঠানোর কারণের নেপথ্যে রয়েছে একটি আর্জি।
২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগে অনেকে খালি খাতা বা ফাঁকা ওএমআর শিট জমা দিয়েও চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এই ভাবে চাকরি পাওয়া ওই শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের অযোগ্য বলে জানিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে চাকরিপ্রাপকরা দাবি করেন, তাঁদেরকে কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চাকরি বাতিল করা হয়েছে। যার জেরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় ওই নির্দেশে। আইনজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেই ফাঁক রাখতে চায়নি। তারা আগেই ওই নোটিস ধরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বলা হয়েছে, নোটিসে ওই চাকরিপ্রাপকদের জানাতে হবে, মামলা বিচারাধীন রয়েছে, কেউ চাইলে আদালতে আসতে পারবেন। নিজেদের যা বলার তা বলতে পারবেন। তবে শুধু তা-ই নয়, বিচারপতি বলে দিয়েছেন, নোটিস ধরিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়। নোটিস পাওয়ার পর প্রাপ্তিস্বীকারও করতে হবে ওই কর্মীদের। সবাই নোটিস পেয়েছেন এই মর্মে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে হবে তাঁদের দিয়ে। তা না করলে ডিসেম্বরের বেতন পাবেন না।
আদালতের এই নির্দেশ কার্যকর করার জন্য এবং তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে কি না দেখার জন্য এক জন নোডাল অফিসার নিয়োগ করার কথাও বলা হয়েছে হাই কোর্টে। আপাতত সেই নোডাল অফিসার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।