কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চে শুনানি ছিল মামলাটির। ফাইল চিত্র
বিদেশে থেকেও পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন এক তৃণমূল প্রার্থী। তিনি কী ভাবে তা দিতে পারলেন? তা তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেওয়া হল রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ বলেছেন, ২৮ জুনের মধ্যে কমিশনকে এ সংক্রান্ত তদন্তের রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। তার পর এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে কলকাতা হাই কোর্ট। অন্য দিকে, কমিশনসূত্রে খবর ওই প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়ার পদ্ধতিতে কোনও ত্রুটি নজরে পড়েনি কমিশনের।
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে জেলায় জেলায় অশান্তি, রক্তপাত, হিংসা, বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। মনোনয়ন ঘিরে হওয়া অশান্তির জেরে রাজ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২১৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে খোদ নির্বাচন কমিশন। বিরোধীরা এমনও অভিযোগ করেছেন যে, নিরাপত্তাহীনতার কারণে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কেন্দ্রে পৌঁছতেই পারেননি বহু প্রার্থী। এই সমস্ত অভিযোগের মধ্যেই জানা যায়, তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী মহিরুদ্দিন গাজি হজযাত্রার জন্য বিদেশে গেলেও পঞ্চায়েত ভোটের জন্য তাঁর মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এবং সেই মনোনয়ন পত্রে তাঁর স্বাক্ষরও আছে। এ বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনিয়মের অভিযোগে মামলা করেছিলেন বিরোধীরা। শুক্রবার সেই মামলারই শুনানিতে কমিশনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিংহ। একই সঙ্গে ওই প্রার্থী বিদেশে থেকেও কী ভাবে মনোনয়ন পত্রে স্বাক্ষর করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবারই এই মামলাটি ওঠে হাই কোর্টে। আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, ‘‘এক দল মনোনয়ন দিতে গিয়ে বাধা পাচ্ছে, মার খাচ্ছে। আর এক দল বিদেশে বসে মনোনয়ন জমা দিচ্ছে। কী নিয়মে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয় তা স্পষ্ট করতে হবে কমিশনকে।’’ এ দিকে, মহিরুদ্দিনের আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থী সশরীরে না গেলেও মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়। প্রার্থীর নির্বাচনী প্রস্তাবক গেলেও মনোনয়ন জমা দেওয়া হতে পারে।’’ পরে শুক্রবার কমিশন জানায়, তারা মহিরুদ্দিনের মনোনয়নে কোনও ত্রুটি পায়নি। এর পরই মনোনয়নে মহিরুদ্দিনের স্বাক্ষর নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তিনি বলেন প্রার্থী বিদেশে গিয়েছেন ৪ জুন। রাজ্যে ভোট ঘোষণা হয়েছে ৮ জুন। ফলে বিদেশে যাওয়ার আগে তাঁর ভোট কবে জানার কথা নয়। অথচ মহিরুদ্দিনের আইনজীবী জানিয়েছেন, তিনি বিদেশে থাকা সত্ত্বেও তাঁর মনোনয়নপত্র জমা নিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। মনোনয়ন জমা দিতে প্রার্থীর স্বাক্ষর প্রয়োজন। তা হলে তিনি ওই মনোনয়ন পত্রে সই করলেন কী করে? আদালতের এই প্রশ্নে আপাতত কোনও জবাব দেয়নি কমিশন। তবে কমিশনসূত্রে পরে জানানো হয়েছে, মহিরুদ্দিনের মনোনয়নপত্রে কোনও ত্রুটি ছিল না। যদিও স্বাক্ষর প্রসঙ্গটি স্পষ্ট হয়নি কমিশনের জবাবে।