গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শেষ করার জন্য ইডিকে ৮৭ দিন সময় দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সংস্থাকে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলল, “৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করুন। ১৯ মাস ধরে তদন্ত চলছে। অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না!’’
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলার। সেখানেই বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পড়েন ইডির ডেপুটি ডিরেক্টর। প্রথমে অভিষেককে তলব, তার পর তদন্তের ধীর গতি— এই দু’টি বিষয়েই আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডিকে।
আদালত ইডির কাছে জানতে চেয়েছিল, আগে অভিষেককে তলব করার বদলে যদি তারা নথিগুলি দেখে তার পর সমন পাঠায়, তবে কি কোনও অসুবিধা হবে? বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে ইডিকে তাদের মতামত জানাতে বলেছিল আদালত। কিন্তু ইডি এ নিয়ে আপত্তি তোলে। তারা বলে, সব তথ্য তাদের কাছে আছে, এখন তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রস্তুত। এর পরেই হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ পাল্টা প্রশ্ন করে ইডিকে।
বৃহস্পতিবার অভিষেকের তরফে ডিভিশন বেঞ্চের সামনে সওয়াল করছিলেন অভিষেকের আইনজীবী অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি এবং আরও এক আইনজীবী জিষ্ণুু সাহা। ছিলেন ইডির আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী এবং ইডির ডেপুটি ডিরেক্টরও। বিচারপতি সেনের সঙ্গে তাঁদের কথোপকথনের মাঝেই আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে ইডি।
অভিষেকের আইনজীবী মনুসিঙ্ঘভি: সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি তদন্তকারী অফিসারকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন। লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির কী ধরনের কারখানা রয়েছে? জল না জলের বোতল? গঙ্গার জল? এক জন তদন্তকারী অফিসার হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না-ও থাকতে পারেন। কোর্টে দাঁড় করিয়ে তাঁর উপর প্রভাব তৈরি করা হচ্ছে।
বিচারপতি সেন: সিঙ্গল বেঞ্চে ইডি যা বলেছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আপনার কি মনে হয় না খুবই সচেতন ভাবে ইডি ওটা ড্রাফ্ট করেছে?
মনুসিঙ্ঘভি: সেই জন্যই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ চাইছি। ২৫ এবং ২৭ সেপ্টেম্বর এই দু'দিনের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক।
বিচারপতি সেন: সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ নিয়ে ভাবছি না। তবে আপাতত ইডির সমনের প্রেক্ষিতে তদন্তের বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। (আদালত বলেছিল, অভিষেকের কাছে যা যা নথি চাওয়া হয়েছে, তা তিনি পাঠিয়ে দিলে হবে কি না সে ব্যাপারে ইডি তাদের মতামত জানাক। সেই নথিতে সন্তুষ্ট না হলে ইডি অভিষেককে ডাকতে পারে)
ইডির আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী: আমাদের কাছে অনেক তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। অভিষেক শুধু নথি পাঠিয়ে দিলে হবে না। অভিষেকের হাজিরা হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। জুন মাসে প্রথম সমন করা হয়েছে। তিনি আসেননি। এমনকি পরে জিজ্ঞাসাবাদেও সহযোগিতা করেননি অভিষেক।
বিচারপতি সেন: আগে আপনারা নথি দেখুন। তার পর তৈরি হয়ে একটি নির্দিষ্ট দিনে সমন করুন। কিন্তু আগেই সমনের উপর জোর দিচ্ছেন কেন?
ইডির আইনজীবী: আমাদের কাছে অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। আমরা এখনই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে তৈরি আছি।
বিচারপতি সেন: আগে নথি দেখলে অসুবিধা কোথায়? সব নথি দেখলে তো আপনাদের তদন্তে সুবিধা হওয়ার কথা। নতুন কোনও তথ্য পেলে আপনাদের সমনে আরও সুবিধাও হতে পারে। এতে কেন আপত্তি করছেন।
ইডির আইনজীবী: আদালত আমাদের পুরো বক্তব্য শুনছে না। এই মামলা গ্রহণযোগ্য হওয়াই উচিত নয়। এই বিষয়ে বলতে দেওয়া হোক। এই মামলায় ৭ জন প্রভাবশালীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১০৬ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেফতার করার পরে অভিষেকের নাম উঠে এসেছে।
আইনজীবী সাহা: তা হলে নথি দেওয়ার জন্য ন্যূনতম সাত দিন সময় দেওয়া হোক।
ইডির আইনজীবী: সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি এক দিনে হয়ে যাচ্ছে। অথচ ইডি নথি চাইলে দু’সপ্তাহ সময় চাওয়া হচ্ছে। অভিষেকের সমস্ত যুক্তির সহজ উত্তর আমাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু তা আদালত বলার সুযোগ দিচ্ছে না।
বিচারপতি সেন: আপনাদের সমন পাঠাতে কেউ বাধা দিচ্ছে না। কাউকে সমন পাঠানো হলেই আদালত তাঁকে অভিযুক্ত বলতে পারে না। আগে নথি দেখুন। কিন্তু তা না করে আপনারা অতীত ধরে বসে আছেন। বর্তমানের কথা বলুন। একটি নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে নথি চান। সন্তুষ্ট না হলে সমন পাঠান। আর যদি কোনও নথি না দেন তা হলে যখন খুশি ডাকবেন। প্রয়োজনে আমরা অভিষেকের হাজিরার নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দেব। তখন কোনও অভিষেকের অজুহাত মান্যতা দেওয়া হবে না।
ইডির ডেপুটি ডিরেক্টরকে বিচারপতি সেন: ১৯ মাস ধরে তদন্ত চলছে। অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করুন।
বিচারপতি সেন: নথির জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে না। ১০ অক্টোবরেই নথি দিতে হবে।