পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর থানায় গণধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের চরম উদাসীনতা নিয়ে এক হাত নিল কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল ছবি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা দেখিয়েছে পুলিশ। তা নিয়ে এ বার রাজ্য পুলিশকে সতর্ক করল কলকাতা হাই কোর্ট। রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে ডেকে বলা হল, ‘‘রাজ্যের সব পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়ে দিন, কোনও অভিযোগ এলে তা নিতেই হবে। না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।’’
রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে রিপোর্ট দিয়ে আনন্দপুর থানায় গাফিলতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি জানান, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের গাফিলতি হয়েছে। ভবিষ্যতে ওই পুলিশ সুপার যাতে এ রকম কিছু না করেন, সে বিষয়ে তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে বলেও জানান ডিজি। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা অবশ্য তাতে অনড়। ডিজিকে তিনি বলেন, ‘‘খালি সতর্ক করলে বা পরামর্শ দিলে হবে না। ব্যবস্থাও নিতে হবে।’’ পাশাপাশি, ডিজি-কে তাঁর নির্দেশ, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের ‘গাফিলতি’র কথা যেন তাঁর সার্ভিস বুকে লিখে দেওয়া হয়। প্রাক্তন পুলিশ কর্তাদের একাংশের দাবি, সার্ভিস বুকে এই বিষয়টি লিখে দিলে ওই আইপিএস অফিসারের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে একাধিক সমস্যা হতে পারে।
বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ এলে কোনও রকম দেরি না করে দ্রুত এফআইআর করে তদন্ত শুরু করতে হবে। যদি কোনও গাফিলতি হয়, সে ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ জেলা পুলিশ সুপার বা বিভাগীয় কমিশনারদের বিরুদ্ধে স্বতপ্রণোদিত ভাবে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে রাজ্যকে। একই সঙ্গে আদালতের এই নির্দেশের কথা বা নির্দেশিকা জারি করে সব এসপিদের জানাতে হবে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে। সেই নির্দেশ নিজেরা পড়ে তাতে স্বাক্ষর করে ফের ডিজির কাছে পাঠাবেন জেলা পুলিশ সুপার বা পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনারেরা।
আনন্দপুরের ওই গণধর্ষণের অভিযোগ পুলিশ না নেওয়ার ইতিমধ্যে আদালতের নির্দেশে ওই থানার ওসি এবং বিভাগীয় ডিএসপির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। নির্যাতিতার আইনজীবী সৌম্যজিৎ দাস মহাপাত্রের অভিযোগ, শুধু এই একটি ঘটনা নয়, শুধু ওই জেলা নয়, রাজ্যের আরও কিছু জেলায় এমন গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আদালতও মেনে নিয়েছে, অভিযুক্ত এসপির বিরুদ্ধে এমন মামলা এই এজলাসেই ঝুলে রয়েছে।