—ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাইকোর্টে বার বার আবেদন জানিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি। অবশেষে এক রকম বাধ্য হয়েই ঘূর্ণিঝড় আমপানের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সিএজি তদন্তে সম্মত হয়েছে নবান্ন। সিএজি-কর্তারা গত সোমবার নবান্নে এই বিষয়ে অফিসারদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক সেরে ফেলেছেন। প্রথাগত ভাবে অডিটের সূচনায় এই ধরনের প্রথম বৈঠক ‘এন্ট্রি কনফারেন্স’ নামে প্রশাসনিক মহলে পরিচিত। যা অডিট প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ। নবান্নের খবর, এক গুচ্ছ প্রশ্নাবলি পাঠিয়ে সিএজি আমপানের ত্রাণ সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য চেয়েছে। অডিট-কর্তারা দ্রুত জেলা সফর শুরু করবেন বলে খবর।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সিএজি মূলত ছ’টি জেলায় আমপানের ত্রাণ-দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করবে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলি জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ক্ষয়ক্ষতি এবং ত্রাণ বিলির সবিস্তার তথ্য চেয়েছে তারা। ওই ঘূর্ণিঝড়ে কোন কোন পঞ্চায়েত এলাকায় কী ধরনের ক্ষতি হয়েছিল, কিসের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি হল, সেই তালিকা ধরে ত্রাণের টাকাই বা দেওয়া হল কী ভাবে ইত্যাদি তথ্য সিএজি-র হাতে তুলে দিতে হবে। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকার সিএজি অডিট করাতে রাজি হয়েছে। আমরা এই বিষয়ে সিএজি-র সঙ্গে সহযোগিতা করব। ইতিমধ্যেই নাম ও ঠিকানা-সহ ত্রাণ প্রাপকদের সবিস্তার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সরকারি ওয়েবসাইটে।’’
আমপান-অডিট নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিল নবান্ন। উচ্চ আদালত তা মানেনি। সরকারের সামনে খোলা ছিল দু’টি পথ: সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া অথবা সিএজি অডিট মেনে নেওয়া। ভোট ঘোষণার মুখে শেষ পর্যন্ত শীর্ষ আদালতে না-গিয়ে সিএজি অডিটেই সম্মতি দেয় নবান্ন।
এক প্রশাসনিক কর্তা জানান, হাইকোর্ট প্রথমে তিন মাসের মধ্যে আমপান-দুর্নীতির তদন্ত শেষ করতে বলেছিল। রাজ্য সরকার তখন সেটা মেনে নিলে ভোটের মুখে তদন্তের কাজ শেষ হয়ে যেত। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের মতে, সিএজি তদন্ত নিয়ে টালবাহানা করায় আখেরে লাভ হবে নবান্নেরই। কারণ, সরকার এত দিনে সম্মতি দিলেও তদন্ত শেষ হতে হতে ভোট পেরিয়ে যাবে। তদন্তের ফল যা-ই হোক, তা নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না।
রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এই নিরীক্ষার বিষয়ে সিএজি-র সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলেছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। ঠিক হয়েছে, অডিটরদের চেয়ে পাঠানো নথিপত্র দেবে সরকার। তার পরে জেলায় গিয়ে খাতাপত্র যাচাই করা হবে। ত্রাণ বিলিতে কোনও রকম প্রক্রিয়াগত ত্রুটি হয়েছিল কি না, দেখা হবে সেটাও। বাছাই করা কিছু পঞ্চায়েতে গিয়ে উপভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন সিএজি-র অডিটরেরা। যদিও বিধানসভার নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গেলে সেই প্রক্রিয়া ঠিক কী ভাবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরেই সংশয় রয়েছে।