শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র
এনআরসি আতঙ্কে প্রথম মৃত্যু দেখেছিল মুর্শিদাবাদের ডোমকল। সিএবি’র ছায়ায় সেই ধারাই বজায় থাকল জেলায়। ফুলশহরী গ্রামে সিএবি’র আতঙ্কেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন কুদরত শেখ (৫৭) নামে এক গ্রামবাসী। তাঁর পরিবারের দাবি, গত তিন দিন ধরে আতঙ্কে প্রায় বাক-হারা মানুষটা নাওযা-খাওয়া ভুলে সারা দিন একই কথা বিড়বিড় করতেন— ‘‘এই বার কী অইব!’’
বৃহস্পতিবার নিজের চায়ের দোকান থেকে বাড়ি ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি। গ্রামেই একটি চায়ের দোকান চালাতেন কুদরত। সন্ধে থেকে সে দোকান রাত-তক গমগম করত। দোকানেই দিনভর চলত টিভি। খবর দেখতেন তিনি। বুধবার রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ হওয়ার পর থেকেই টিভিতে চোখ রেখেই কেটে যেত তাঁর সময়। চায়ের দোকানে আর মন ছিল না।
পরিবারের লোকজনের কথায়, ‘‘ছেলেদের তাগাদা দিচ্ছিলেন, ভিটে বাড়ির বাড়ির দলিলটা জোগাড় করতে। পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতেও যান বারকয়েক। সমস্যা মেটেনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে ছেলেদের বলেন, ‘কিছু উপায় হল রে!’’ ছেলে আপেল শেখ তাঁকে ভরসা জোগান, ‘‘এত ভয়ের কিছু নেই, যা হওয়ার সবার হবে!’’ ভরসা পাননি তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুক চেপে বসে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি। তাঁর স্ত্রী সুরতভান বিবি বলছেন, ‘‘রাতে খেতে পারত না ক’দিন ধরে। জোর করায় খেল বটে, তবে না খাওয়ার মতোই। কথাও বলল না একটাও। খাওয়ার শেষে শুধু বলল ‘এই বয়েসে কোথায় যাব বল দেখি!’’পরিবারের দাবি, এর পরেই বুকে হাত দিয়ে শুয়ে পড়েন তিনি। তার পরেই বুকে ব্যথা। তাঁর ছেলে ছুটে গিয়ে গ্রামের হাতুড়েকে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন। রাতে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি। তাঁর বাড়ির লোক জানান চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘দুশ্চিন্তা থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।’ বড় ছেলে আপেল বলছেন, “চায়ের দোকানে যাঁরাই আসত, বাবা জিজ্ঞেস করত, ‘কি গো দেশ ছাড়তে অইব নাকি’, সেই আতঙ্কে কোন দেশে চলে গেলেন আব্বা!’’