পাহাড়ে প্রতিবাদ: এনআরসি, সিএএ-বিরোধী পদযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দার্জিলিঙে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনড় অবস্থানের কথা ঘোষণা করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের জানিয়ে দিলেন এ রাজ্যে কোনও ভাবেই সিএএ, এনআরসি বা এনপিআর তিনি চালু করতে দেবেন না। সেই সঙ্গেই তাঁর আহ্বান, ‘‘কেউ কোনও কাগজ দেখতে এলে কিছু দেখাবেন না।’’
কলকাতা-সহ দেশের নানা স্থানে ‘হম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে’ স্লোগান তুলে আন্দোলন যখন বাড়ছে তখন বুধবার মমতার আহ্বানকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতিকরা। তাঁদের অনেকেরই মতে, আন্দোলনের রাজনৈতিক রং বিচার না-করে তিনি কাগজ না দেখানোর বিষয়টি বড় করে তুলে ধরে নাগরিকত্ব আন্দোলনকে বৃহত্তর মঞ্চ দিতে চেয়েছেন।
মঙ্গলবার লখনউয়ে শাহ হুমকি দেন ‘‘যাঁরা যতই বিরোধিতা করুন, সিএএ প্রত্যাহার করা হবে না।’’ পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে এ দিন দার্জিলিংয়ে মমতা বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, যত ক্ষণ না এনআরসি, সিএএ, এনপিআর তুলে নেবে, তত দিন এই আন্দোলন চলবে। এটা আমাদের অধিকারের লড়াই, বাঁচা-মরার যুদ্ধ। এই লড়াই আমাদের নাগরিকত্ব, ইজ্জত, জমি, মাটি বাঁচানোর লড়াই। আমরা এই লড়াই করতে তৈরি।’’
দার্জিলিংয়ে এ দিন সিএএ-বিরোধী পদযাত্রা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ভানুভবন থেকে শুরু করে চার কিলোমিটার ঘুরে মিছিল শেষ হয় চকবাজারের কাছে মোটরস্ট্যান্ডে। সেখানেই জনসভা করেন তিনি। দার্জিলিংয়ের বিধায়ক এবং সাংসদ দুই-ই বিজেপির। তা সত্ত্বেও মমতার পদযাত্রা জনসমাগমের নিরিখে ছিল নজরকাড়া। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক এতটাই যে, অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন, এ সব হলে আমাদের কী হবে? বক্তৃতায় এর জবাব দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমরা সকলেই দেশের নাগরিক। সকলকে বলব, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনার নাগরিকত্ব কে ছিনিয়ে নেবে?’’
এ দিনই উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ও ফালাকাটায় মিছিল ও সভা ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী শরণার্থী ভাইদের জন্য নাগরিকত্ব আইন পাশ করেছেন। আমরা নাগরিকত্ব দিচ্ছি, আর মমতা আটকাচ্ছেন।’’ তাঁর হুমকি, ‘‘প্রতিটি উদ্বাস্তুকে আমরা নাগরিকত্ব দেব। যদি কেউ বাধা দেয়, নামটা লিখে রাখবেন। দেখে নেব, কে বাধা দেয়।’’
এ দিন শাহকে চ্যালেঞ্জ করে মমতা বলেন, ‘‘কাল দেখেছি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বড় বড় জ্ঞান দিয়েছেন। বাংলা থেকে আমরা প্রথমে সিএএ-কে ‘বাই বাই’ বলেছি, এনআরসি-কে ‘বাই বাই’ বলেছি। এনপিআর-কেও-কে ‘বাই বাই’ বলছি।’’ অন্য রাজ্যগুলির উদ্দেশে আরও এক বার তাঁর পরামর্শ, ‘‘আপনারা এনপিআর-এর বৈঠকে গেলেন কেন? এখনও সিদ্ধান্ত নিন— আমরা এনপিআর মানব না।’’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘অনলাইনে হয়ে যাবে বলছে। অনলাইনে কি চাল সিদ্ধ হয়, না স্নান হয়?’’ কেন্দ্রকে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘চালাকি করবেন না। বলছে মোবাইল অ্যাপে সব হয়ে যাবে। অ্যাপে সব নাগরিক হয়ে যাবে? এর থেকে বড় মিথ্যে, বড় চিটিংবাজ আর হয় না!’’
কেন্দ্র যা-ই বলুক, এনপিআর-এর ফর্মে মা-বাবার জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া যে আসলে বাধ্যতামূলক, এ দিন ফের সেই দাবি করে মমতা বলেন, ‘‘তা হলে বিষয়টি ফর্মে রেখেছেন কেন?’’ ‘বেহাল’ আর্থিক পরিস্থিতি আড়াল করতেই ‘ছুপা রুস্তমের’ মতো এই আইন তৈরি করা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তার পরেই বিজেপি নেতৃত্বকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘আমরা কিছু বললে বলবে সবাই পাকিস্তানি। আরে আমরা কেন পাকিস্তানি হব? আমরা তো হিন্দুস্তানি। আপনি কেন প্রতিদিন পাকিস্তানের কথা বলেন? পাকিস্তান কি আপনার বড় বন্ধু?’’