ফাইল চিত্র।
করছিলেন মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণা। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শুক্রবার একটি বিশেষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করে প্রশ্ন আর বিতর্কের মুখে পড়ে গিয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।
মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের মধ্যে ছেলে ও মেয়েদের আপেক্ষিক উৎকর্ষের কথা বলতে গিয়ে ওই বিশেষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উল্লেখ করেন পর্ষদ-প্রধান। ওই সম্প্রদায়ের ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের অগ্রগতির কথা জানান তিনি। বাংলায় বা সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় একটি নয়, অনেক। তা সত্ত্বেও একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের নামোল্লেখ কেন, সেই প্রশ্ন তো ভাসছেই, তার সঙ্গে সঙ্গে এমন উল্লেখের ঔচিত্য-সমীচীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষা শিবির-সহ বিভিন্ন মহলের অনেকে বলছেন, এটা আদৌ যুক্তিসঙ্গত নয়। অনেকে আবার সরাসরি মন্তব্য করেছেন, এর জন্য পর্ষদ-প্রধানের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
শিক্ষা জগতের একাংশের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে কি একটি মাত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে? তা তো নয়। অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাস এই রাজ্যেও। তা হলে বিশেষ একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করে এমন ভাবে ফলাফল ব্যাখ্যা কেন? সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের ফলাফল সংক্রান্ত তথ্য দিতে চাইলে তো সমান ভাবে অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরও তথ্য দেওয়া উচিত।
গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণার সময় প্রথম স্থানের অধিকারিণী ছাত্রীর ধর্ম উল্লেখ করে ঘোর বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তৎকালীন সভানেত্রী মহুয়া দাস। কিছু দিনের মধ্যে তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, সভানেত্রীর অপসারণের পিছনে ছাত্রীর ধর্মোল্লেখের বিষয়টি অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছিল।
পর্ষদ-সভাপতির এ দিনের বক্তব্য সম্পর্কে রাজ্যের সরকারি স্কুল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু জানান, রাজ্য সরকার যখন শিক্ষাকে সর্বজনীন করে তোলার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তখন এই ধরনের বক্তব্য অত্যন্ত অবমাননাকর। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত মানুষজন নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখবেন। এবং এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট লোকজন যাতে বিরত থাকেন, সেই ব্যাপারে তাঁরা উদ্যোগী হবেন।’’
পর্ষদ-সভাপতির এমন বক্তব্য নিয়ে প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, ‘‘যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কথা বলতে হয়, তা হলে প্রতিটি সংখ্যালঘু
সম্প্রদায়ের কথাই বলা উচিত। নাম উল্লেখ করে বিশেষ সম্প্রদায় নিয়ে এ ভাবে বলা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি না।’’ নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘পর্ষদ-সভাপতির এই ধরনের কথা বলা উচিত হয়নি। একটি মাত্র সম্প্রদায়কে নিয়ে বলা মানে তার মেধাকে অসম্মান করা। এই বক্তব্যের জন্য পর্ষদ-সভাপতির ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।’’ তাঁর বক্তব্য, প্রায় একই ভুল করেছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন সভানেত্রী মহুয়া দাস। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘জাতপাত, ধর্মকে কেন্দ্র করে এই ধরনের বিবৃতি একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ, আপাতদৃষ্টিতে প্রশংসাসূচক মনে হলেও এই ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তাদের (উদ্দিষ্ট সম্প্রদায়ের) অসম্মানই করা হয়।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।