ফাইল চিত্র।
একসময় পুজো আসতেই রেডিয়ো, টিভি এবং পরে হোর্ডিং-এ ছেয়ে যেত, পুজোয় চাই অমুক জুতো। আবার গত কয়েক বছরের সেলিব্রিটিদের দিয়ে বিভিন্ন জামাকাপড়, ডিজাইনার পোশাকের বিজ্ঞাপন পুজোর আগে মাতিয়ে দেয় টিভি বা সোশাল মিডিয়ার জানলা। বাদ থেকে গেল ২০২০। নতুন কোনও বিজ্ঞাপন নেই বললেই চলে। করোনা আবহে পুজোর কেনাকেটায় বাঙালি অল্পবিস্তর মাতলেও গত কয়েক বছরের পুজোর বাজারের হিসেবে তা ধারেকাছেও যায় না।
প্রথমে নোটবন্দি, তার পরে গত বছরের আর্থিক ঝিমুনি, শেষে এ বারে করোনা সংক্রমণের ধাক্কায় টানা লকডাউন। গত কয়েক মাস মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন উত্তরের আট জেলার ব্যবসায়ীরা। আনলকে পরিস্থিতি একটু বদল হলেও এ বারে পুজোয় স্বাভাবিকভাবে ক্রেতাদের দেখা মিলেছে অনেকটাই কম। করোনার ভয়ে বাজারে ভিড় করতে চাননি অনেকেই। গেলেও আর্থিক পরিস্থিতির জেরে কেনাকেটার পরিমাণে প্রভাব পড়েছে। চা বাগানে এ বারে ২০ শতাংশ বোনাস দেওয়া হয়েছে। বোনাসের পর বাজারে ভিড় কিছুটা বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু পাহাড়, বনবস্তি, সিঙ্কোনা বাগান থেকে দলে দলে পুজোর বাজার করতে আসার স্রোত ছিল না বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের। শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি, মালদহ, আলিপুরদুয়ার— সব জায়গায় জামাকাপড় ও জুতো মিলিয়ে কমপক্ষে গড়ে ৪০-৬০ শতাংশ ব্যবসা কম হয়েছে। গত কয়েকটি পুজোর হিসেব ধরলে লোকসানের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা ছুঁইছুই।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সুরজিত পাল বলেন, ‘‘করোনায় খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় ধরলেও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কিছুটা কমেছে। প্রায় ৬-৭ মাস অনেকেরই ঘরে বসে জমানো টাকায় সংসার চলেছে। বাজারে টাকার জোগানও খুবই কমে গিয়েছিল। তাই পুজোর বাজারে মন্দা তো স্বাভাবিক।’’
যেমন কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে প্রথমে ভিড় চোখে পড়ছিল না।৷ শেষ লগ্নে অবশ্য কিছুটা খুশি কোচবিহারের জামা ও জুতো ব্যবসায়ীরা। তবে সামগ্রিক ভাবে এবারে ভবানীগঞ্জ বাজারেই ২০ কোটি টাকার ব্যবসা কম হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। জামাকাপড়ে ভবানীগঞ্জ বাজারে ৬-৭ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে মাত্র।
বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির কোচবিহার জেলা সম্পাদক উত্তম কুণ্ডু বলেন, ‘‘অন্যবারের তুলনার এ বারে ষাট শতাংশ ব্যবসা কম হয়েছে। তাতে অসুবিধের মধ্যে পড়তে হয়েছে সবাইকে।’’ ফুটওয়্যার ব্যবসায়ী সমিতির আশিস সাহা জানান, এবারে জুতোর ব্যবসা প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কম হয়েছে।
গৌড়বঙ্গেও একই ছবি। মালদহের ইংরেজবাজার শহরের নেতাজি মোড়। সেখানে পুজোয় ফুটপাতে জুতোর পসরা সাজিয়ে ফি বছর বিক্রি করেন এক যুবক। তিনি বলেন, “ফি বছর দোকানে ৫০ হাজার টাকার জুতো মজুত করে কেনাবেচা করি। এবারে দশ হাজার টাকার জুতো কিনেও বিক্রি করতে পারিনি।” এবারে পুজোয় জুতোর বাজার এমনই ছিল মালদহ এবং দুই দিনাজপুর জেলা জুড়েই। ব্যবসায়ীদের দাবি, গৌড়বঙ্গের তিন জেলায় এ বারে জুতোর ব্যবসায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মার খেয়েছে জামাকাপড়ের ব্যবসাও। বিশেষ করে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন দুর্বিপাকে। মালদহের মার্চেন্ট চেম্বার অব কর্মাসের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, মালদহেই কাপড় ব্যবসায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জুতোয় ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা।