ছবি: রয়টার্স
বন্যা ডুবিয়েছে সব। তার মধ্যেই জল থইথই গ্রাম পেরিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলেছেন কনে। আশা-নিরাশার দুই ছবি এক ফ্রেমে ধরা পড়ল হাওড়ার আমতায়।
মেয়ের কপাল রাঙা সদ্য দেওয়া সিঁদুরে। মাথায় শোলার মুকুট। বরের সঙ্গে বাঁধা গাঁটছড়া। আমতার সেহাগড়িতে সদ্য পরিণয়ে আবদ্ধ যুগল প্লাবনের মধ্যেই বাঁধনহারা হাসির আনন্দ বয়ে আনলেন। ঠিক এমন ভাবেই কয়েক দিন আগে খানাকুলের খোন্দকার আমিরুল হকও নৌকায় চেপে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন।
আর পাঁচটা বিয়ের মতোই বিবাহবাসর বসার কথা ছিল সায়নী পাত্র আর চিরঞ্জিৎ পাত্রের। প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছিল। নিমন্ত্রণও শেষ। সেই সময়েই আকাশ ভেঙে এল বৃষ্টি। সব পণ্ড হল। কিন্তু বিয়ে তো হতেই হবে। কয়েক মাস আগে বিয়ে ঠিক হওয়ার সময় থেকে যে আনন্দ উৎসব শুরু হয়েছে, তা ব্যর্থ হতে দিতে চাননি দু’পক্ষই। তাই বৃষ্টি মাথায় করেই আমতা দু’নম্বর ব্লকের ভাণ্ডারগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ রামচন্দ্রপুরে, সায়নীর বাড়িতে ঠিক সময়ে যাওয়ার জেদ চেপেছিল পেশায় ব্যবসায়ী চিরঞ্জিতের।
নিজস্ব চিত্র
বুধবার, বিয়ের সময় থেকেই জল থইথই অবস্থা আমতায়। চিরঞ্জিৎ, গুটিকয়েক বরযাত্রী নিয়ে নৌকা করেই গিয়ে উপস্থিত হন সেহাগড়ি। সেখান থেকে গাড়িতে যান মেয়ের বাড়ি, স্থানীয় ১০ নম্বর পোল এলাকায়। বিয়ে হয় সামান্য আয়োজনে। বৃহস্পতিবার ফেরার পথেও অর্ধেক রাস্তা তাঁরা আসেন গাড়িতে। তার পর নৌকায় করে শ্বশুরবাড়ি। তবে বন্যার মধ্যেও বর কনের ধুতি, বেনারসি ছিল পরিপাটি।
বৃহস্পতিবার নৌকায় ওঠার আগে রাঙা মুখে সায়নী জানালেন, ‘‘দারুণ অভিজ্ঞতা। অ্যাডভেঞ্চার যেন! একটু ভয় করছে ঠিকই, কিন্তু এমন অনূভূতি ক’জনের হয়? বাবাহ্, সারাজীবন মনে থাকবে।’’
মাথা নেড়ে হাসলেন চিরঞ্জিতও। বললেন, ‘‘প্রশাসনের ভাবা উচিত। এমন পরিস্থিতি প্রতি বছর কেন হবে?’’ নবদম্পতির নৌকা যাত্রা দেখে তখন হাসি ফুটেছে জল-কাদায় বিপর্যস্ত গ্রামবাসীদের মুখেও। দূর থেকে হাত নেড়ে অভিনন্দনও জানাচ্ছেন তাঁরা। পাল্টা হাত নাড়ছেন সায়নীরা। গ্রামবাসীরা বলছেন, সত্যিই, ধন্যি বিয়ে!