শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। — ফাইল চিত্র।
এ রাজ্যের কোনও শিক্ষাবিদকে খুঁজে পায়নি রাজভবন। তাঁর কথায় উঠবে-বসবে, এমন কিছু ‘পাপেট’কেই স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য প্রস্তাবিত সার্চ কমিটিতে নিয়োগ করতে চেয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বৃহস্পতিবার এমন ভাবেই কটাক্ষ করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনও রকমের বাছবিচার করে না শিক্ষা দফতর। সে কারণেই আইএসআই-এর এক জন শিক্ষাবিদকে সার্চ কমিটিতে রাখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য প্রস্তাবিত সার্চ কমিটির পাঁচ জন সদস্যের নাম শীর্ষ আদালতে পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই তালিকায় রয়েছেন, বীরেন্দ্রকুমার তিওয়ারি (উপাচার্য, আইআইটি, খড়্গপুর), উদয় মৈত্র (অধ্যাপক, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, বেঙ্গালুরু), রমেশ চন্দ্র (উপাচার্য, মহারাজা সুরোজমল বৃজ বিশ্ববিদ্যালয়, ভরতপুর), সৈয়দ ই হাসনৈন (অধ্যাপক, আইআইটি, দিল্লি), ইন্দ্রনীল মান্না (উপাচার্য, বিআইটি, মেসরা)। এই তালিকায় আইআইটি, খড়্গপুরের উপাচার্য ছাড়া সকলেই ভিন্রাজ্যের শিক্ষাবিদ। তা নিয়েই কটাক্ষ করলেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘‘যদি রাজ্যপালের তালিকা দেখেন, সেখানে এক জনও রাজ্যের শিক্ষাবিদ নেই। আমাদের সুপারিশ করা নামগুলি দেখলে বুঝবেন, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাছবিচার করা হয়নি। সার্চ কমিটিতে আইএসআই-এর এক জন প্রকৃত শিক্ষাবিদের নাম রাখতে চেয়েছি। কিন্তু আশ্চর্য, রাজভবন এ রাজ্যের কোনও শিক্ষাবিদকেই খুঁজে পেল না।’’
এখানেই থামেননি ব্রাত্য। তিনি তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘যাঁরা ওঁর কথা শুনবেন, উঠবেন, নাচবেন, এমন কিছু পাপেট উনি রেখেছেন কমিটিতে। যেমন ভাবে উপাচার্য নিয়োগ করছিলেন, সেই প্রক্রিয়াই জারি রেখেছেন তিনি।’’
গত ১৫ সেপ্টেম্বর উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত কাটাতে সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের করা মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট মৌখিক ভাবে জানায়, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর এই কমিটি গঠন করা হবে বলে জানানো হয় আদালতের তরফে। সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির সদস্য মনোনয়নের জন্য রাজ্য, রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)— তিন পক্ষকেই পাঁচটি নাম জানাতে বলে আদালত। বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, সদস্যদের নাম জানার পর প্রত্যেক পক্ষ থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে তিন জনের সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটিই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্থায়ী উপাচার্যের নামও প্রস্তাব করবে।
সেই মতো তিন পক্ষই পাঁচ জন করে শিক্ষাবিদের নাম পাঠিয়েছে। রাজ্যের তালিকায় রয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী, আইএসআই-এর অধ্যাপক অভিরূপ সরকার, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অভিজিৎ চক্রবর্তী, সংস্কৃত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায়।