ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা ছাত্রছাত্রী ভর্তির বিষয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে সরাসরি চিঠি লিখতে পারে কি? এই প্রশ্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর। বিশ্বভারতী-সহ দেশের সব কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য এ বার থেকে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা (সিইউইটি) নেওয়া হবে এবং সেই পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজ্যের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ুয়া ভর্তির সুপারিশ করেছে ইউজিসি। ব্রাত্যবাবুর প্রশ্ন সুপারিশের পদ্ধতি নিয়েই। তিনি বলেন, ‘‘ওরা রাজ্য সরকারকে বাইপাস করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ভাবে সরাসরি চিঠি লিখতে পারে না।’’
শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এই একতরফা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবেন। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি বিষয়ে সব কিছু খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকার একটি কমিটি তৈরি করবে। সেই কমিটি অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ করবে রাজ্য।
ইউজিসি এই বিষয়ে শুধু যে রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি লিখেছে, তা নয়। দেশের ডিমড ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাছেও একই সুপারিশ করেছে। ইউজিসি-র চেয়ারম্যান এম জগদেশ কুমার জানিয়েছেন, বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস, জামিয়া হামদর্দ-সহ আটটি ডিমড বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই অভিন্ন প্রবেশিকার ফলের ভিত্তিতে পড়ুয়া ভর্তি নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
তবে ওই প্রবেশিকা পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ভর্তি নেওয়ার জন্য ইউজিসি যে-সুপারিশ করেছে, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষা শিবিরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সভাপতি পার্থিব বসু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘দেশের ভৌগোলিক ও সামাজিক বৈচিত্র, রাজ্যগুলির অধিকার ও নিজস্ব বাস্তবতাকে অস্বীকার করে দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে এক ছাঁচে ফেলার যে-অভিমুখ নতুন শিক্ষানীতিতে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, এই নির্দেশ তারই প্রতিফলন। এতে লুণ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাধিকার।’’ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (আরবুটা) সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত দাসের বক্তব্য, এই উদ্যোগ আসলে কেন্দ্রে সরকারের ‘এক দেশ, এক ভাষা’ অথবা ‘এক দেশ, এক ধর্ম নীতির’ই নবতম সংযোজন। তিনি বলেন, ‘‘এই অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা আসলে একটি সমান্তরাল কোচিং ব্যবসার জন্ম দেবে এবং অবশ্যই তা হবে অনলাইনে। প্রান্তিক অঞ্চলের ছাত্রছাত্রী এবং দরিদ্র পরিবারের পড়ুয়াদের পক্ষে এই ব্যবস্থায় সফল হওয়াটা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠবে।’’
অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছে এসএফআই। সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস এ দিন বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বৈচিত্রের কথা মাথায় রাখলে এই পরীক্ষা অপ্রয়োজনীয়। এর ফলে কোচিং মাফিয়াদেরও রমরমা বাড়বে।’’ এই পরীক্ষা নেবে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি। তাদের পরীক্ষা পদ্ধতি প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়, মন্তব্য ময়ূখের।