Anand Bose-Bratya Basu

মুখ্যমন্ত্রীর সামনে বসে দুঃখপ্রকাশ করুন! উপাচার্য নিয়ে সুপ্রিম-নির্দেশের পর বোসকে কটাক্ষ ব্রাত্যের

বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মামলা চলাকালীন কেন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করছেন রাজ্যপাল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। এ নিয়ে রাজ্যপালের কাছে জবাবও তলব করা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:০৩
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের আলোচনা চান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।

আর অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবেন না রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোস। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরেই বোসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রীর কটাক্ষসিক্ত পরামর্শ, রাজ্যপালের উচিত, অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে বৈঠকে বসে সমাধানসূত্র খোঁজা। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথা না শোনার জন্য তাঁর কাছে দুঃখপ্রকাশ করাও উচিত রাজ্যপালের।’’ শীর্ষ আদালতের নির্দেশ এবং ব্রাত্যের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজভবনের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

Advertisement

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মামলা চলাকালীন কেন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করছেন রাজ্যপাল, তা নিয়ে শুক্রবার প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। এ নিয়ে রাজ্যপালের কাছে জবাবও তলব করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীন কোনও অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করা যাবে না। এ ছাড়াও অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের ভাতা ও অতিরিক্ত সুবিধায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত। জানিয়ে দিয়েছে, অন্তর্বর্তী উপাচার্যেরা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। বেতনও পাবেন। কিন্তু কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সর্বোচ্চ বিচারালয়ের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্রাত্য।

শুক্রবার রাজভবনের সামনে শাসক তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে সামনে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যে সুবিচার চেয়েছিলাম, সুপ্রিম কোর্ট তাতে সিলমোহর দিয়েছে। এখন যেখানে (রাজভবন) দাঁড়িয়ে আছি, এই বাড়ির অস্থায়ী বাসিন্দার জন্য দুঃখই হচ্ছেন। আচার্যের পরাজয় হলে আমাদের তো খারাপ লাগারই কথা।’’ ব্রাত্যের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়ে যে জট তৈরি হয়েছে, তা মোটেই কাম্য ছিল না। রাজ্য সরকার বার বার রাজ্যপালের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক বসতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজ্যপালই কোনও উদ্যোগ দেখাননি বলে অভিযোগ করেছেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বার বার করে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে একসঙ্গে বসে যাতে সুষ্ঠু ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য সঠিক উপাচার্য নিয়োগ করতে পারি। কোনও তাবেদার উপাচার্য নয়! কিন্তু তা হয়নি।’’ ব্রাত্যের আশা, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসতে আগ্রহী হবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চাইব, রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে বৈঠকে বসুন। বাইরের কারও হস্তক্ষেপ আর দরকার পড়বে না।’’

Advertisement

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে আচার্য সিভি আনন্দ বোসের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকার ও বোসের মধ্যে সংঘাতের ফলে রাজ্যের ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও কোনও স্থায়ী উপাচার্য নেই। গত ২১ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পর গত ১৫ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজেই সার্চ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ আদালত।

সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর সব পক্ষ নাম সুপারিশ করলেও সার্চ কমিটি এখনও তৈরি হয়নি। তা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই গত ১ অক্টোবর রাজ্যের আরও ছ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভাবে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছিলেন বোস। তাঁদের মধ্যে এক জন আবার অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার। সেই সময়েই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। এরই পাশাপাশি, রাজ্যপালের প্রতিনিধি হিসাবে যে চার জনের নাম জমা পড়েছিল, তাঁদের দু’জনের বিষয়েও শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে মিলেছিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর সূত্রে। তার পর সুপ্রিম কোর্টের এই শুনানিতে বড় ধাক্কা খেলেন রাজ্যপাল।

ব্রাত্যের মত, শুক্রবার আদালতের রায়ের পর রাজ্যপালের আর আচার্য পদেই থাকা উচিত নয়। শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা চাইব, মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার বিলে উনি অবিলম্বে সই করুন।’’ শুধু তা-ই নয়, রাজ্যপাল যাঁদের অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেছেন, তাঁদের উদ্দেশেও ব্রাত্য বলেন, ‘‘যদি আত্মমর্যাদা থাকে, তা হলে এখনই তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement