Pull Car Accident

জিতে, জিতিয়ে ফিরল দিব্যাংশ

১৪ ফেব্রুয়ারি স্কুলের পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানজুলিতে পড়ে যায় দিব্যাংশ-ঋষভদের স্কুলগাড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১২
Share:

হাসপাতাল থেকে ছুটির পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে দিব্যাংশ ভগত। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্য ছবি এসএসকেএম হাসপাতাল-চত্বরে।

Advertisement

হুগলির পোলবায় স্কুলগাড়ি দুর্ঘটনায় খুদে পড়ুয়া ঋষভ সিংহের মৃত্যুতে বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন চিকিৎসকেরাও। ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আর এক খুদের ক্ষেত্রে ঘটল ব্যতিক্রম। চিকিৎসকদের সমবেত প্রচেষ্টায় সুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরল ঋষভের বন্ধু ও সহপাঠী দিব্যাংশ (দিব্যাংশু নয়) ভগত।

ছেলেকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ার আগে দিব্যাংশের বাবা গোপীনাথ ভগত বলেন, ‘‘ঋষভের জন্য খারাপ লাগছে। পুলকার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু করা উচিত। প্রয়োজনে একটা কমিটি গঠন করে অভিভাবকদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।’’

Advertisement

১৪ ফেব্রুয়ারি স্কুলের পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানজুলিতে পড়ে যায় দিব্যাংশ-ঋষভদের স্কুলগাড়ি। দু’জনের ফুসফুসে নয়ানজুলির কাদাজল ঢুকে গিয়েছিল। এসএসকেএমে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দু’জনের চিকিৎসা শুরু হয়। ঋষভকে বাঁচানো যায়নি। তবে চিকিৎসকদের অতন্দ্র নজরদারিতে ধীরে ধীরে উন্নতি হয় দিব্যাংশের। ভেন্টিলেটরে সাড়া দেয় সে। ট্রমা কেয়ারের ইনচার্জ শর্বরী সোয়াইকা জানান, ফুসফুসে নোংরা জল ঢুকে যাওয়ায় খুদে পড়ুয়ার শরীর সংক্রমণের শিকার হয়েছিল। দীর্ঘদিন ভেন্টিলেশনে রাখলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। দু’ধরনের সংক্রমণ রুখতে কড়া অ্যান্টিবায়োটিকে দিব্যাংশ কী ভাবে সাড়া দেয়, তার উপরে অনেক কিছুই নির্ভর করছিল।

এই লড়াইয়ে ছোট দিব্যাংশ যে চিকিৎসকদের জিতিয়ে দেবে, সাত দিনের মাথায় সেই আভাস পাওয়া যায়। ফুসফুস থেকে কাদাজল বার করার পরে ভেন্টিলেটরের মোড ধীরে ধীরে কমানো হচ্ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি খুদের ফুসফুস ফের নিজে নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালাতে সমর্থ হওয়ায় দিব্যাংশকে ভেন্টিলেটর থেকে বার করে আনা হয়। কিন্তু ফের শক্তি অর্জন করে সংক্রমণ হানা দেবে কি না, সেই বিষয়ে আশঙ্কা ছিল। চিকিৎসকেরা জানান, সংক্রমণের উপরে নজর ছিল মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে সিটিভিএস, চেস্ট মেডিসিন, নিউরো সার্জারি, অর্থোপেডিক, পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক সার্জারি এবং ট্রমার সিসিইউ ইনচার্জকে নিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডকে সাহায্য করে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ।

শর্বরীদেবী বলেন, ‘‘রাতে সিসিইউ থেকে বেরোনোর সময় ‘গুড নাইট’ বললে হাত নেড়ে বাই করত দিব্যাংশ। মিষ্টি বাচ্চাটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরায় খুব আনন্দ হচ্ছে। অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়, উপাধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্রের কাছে যখন যা চাওয়া হয়েছে, মিলেছে। সকলের দলগত প্রয়াসে দিব্যাংশকে ফেরানো সম্ভব হয়েছে।’’ উপাধ্যক্ষ জানান, গভীর রাতেও দিব্যাংশের প্রাণদায়ী ওষুধের জন্য তিনি সিসিইউ ইনচার্জের ফোন পেয়েছেন। দলগত তৎপরতায় খুদেকে বাঁচানোর জন্য সিসিইউ ইনাচর্জের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিনি মুগ্ধ।

খুদের নিকটজনেরা বলছেন, পুনর্জন্ম হয়েছে দিব্যাংশের। সন্ধ্যা ৭টার পরে হুইলচেয়ারে শিশুটি যখন ট্রমার চৌকাঠ পার হল, তখন পিছনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার মা রিমা ভগত। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে আনন্দের মুহূর্ত তৈরি হতে দেরি হল না।

উপাধ্যক্ষ রঘুনাথবাবু বলেন, ‘‘বাড়িতে দিব্যাংশকে অতিযত্নে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মানসিক ধাক্কা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি জ্বর, সর্দিকাশি হচ্ছে কি না, সে-দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement