ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলমহলের জেলাগুলির দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন দলনেত্রী। কিন্তু তার পরেও পুরুলিয়ায় আসতে দেখা যায়নি শুভেন্দু অধিকারীকে। বরং প্রায় প্রতি সপ্তাহে জেলায় এসে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। দলের অন্দরে একটা প্রশ্ন ঘুরছিলই— তৃণমূলের পুরুলিয়ার পর্যবেক্ষক কে? ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর কথাতে তারই এক প্রকার উত্তর মিলল। রবিবার পুরুলিয়া শহরের ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভায় শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘পুরুলিয়ায় আমরা শুভেন্দু অধিকারী ও মলয় ঘটক, দু’জন পর্যবেক্ষককে পেয়েছি।”
পরে তিনি জানান, জেলায় দলের পর্যবেক্ষক কে এই বিষয়ে কর্মীদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। তাই সভায় বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, পুরুলিয়ায় দলের দৈনন্দিন কাজকর্মের পর্যবেক্ষণ করবেন মলয়বাবু। সামগ্রিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন শুভেন্দুবাবু। প্রতি সপ্তাহে শ্রমমন্ত্রী জেলায় এসে নেতা কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করবেন। আর মাসে এক বার শুভেন্দুবাবু এসে বৈঠক করবেন।” জেলা সভাপতি জানান, তাঁরা আরও এক বার ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতিসভা করবেন। সেই সভায় আসার কথা রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর।
২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রস্তুতির জন্য সভা ডাকা হলেও, লোকসভায় বিপর্যয়ের পরে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন কর্মীরা সেই প্রসঙ্গই ঘুরে ফিরে এসেছে এ দিন নেতাদের বক্তব্যে। পুরুলিয়ায় রাজ্য সরকার প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছে বলে দাবি করে সম্প্রতি বিধানসভায় জেলার মন্ত্রী, বিধায়ক, সভাধিপতি ও প্রাক্তন সাংসদের সামনে হারের কারণ জানতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের দিকগুলি নিয়ে সার্বিক প্রচার তাঁরা ব্যর্থ বলে স্বীকার করেছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। এ দিনের সভাতেও সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মলয় ঘটক। তিনি বলেন, ‘‘বিগত সাড়ে তিন দশকে বামফ্রন্টের সরকার কী উন্নয়ন করেছে, আর আমাদের সরকার গত আট বছরে কী করছে তার বিশদ তথ্য নিয়ে সার্বির প্রচারে নামতে হবে কর্মীদের।”
শ্রম দফতরের উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও শ্রমিকদের স্বার্থে সামাজিক প্রকল্পগুলির প্রসঙ্গ টেনে শ্রমমন্ত্রী বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যেই সার্বিক ভাবে উন্নয়নের কাজ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকার। সেই কাজ হয়েছে পুরুলিয়াতেও। উন্নয়নের তালিকা আমাদের নিয়ে যেতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে।” অতীতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গ্রামে, শহরের হাটে, বাজারে, মোড়ে পথসভা করতে দেখা যেত তৃণমূলকে। গত কয়েক বছর ধরে সেই ধরনের সভা কার্যত দেখাই যায়নি। প্রসঙ্গ তুলে মলয়বাবু ও শান্তিরামবাবু এ দিন বলেন, ‘‘ছোটছোট পথসভা করে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে সার্বিক প্রচারে নামতে হবে।’’
একই সঙ্গে দলের অনেক নেতা কর্মীদের মধ্যে জনবিচ্ছিনতার প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে বৈঠকে বলেছেন দুই মন্ত্রী। কর্মীদের উদ্দেশে তাঁদের নিদান, ‘‘গ্রামে, শহরে মানুষের কাছে যান। তাঁদের সমস্যা শুনুন। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করুন। দল ঘুরে দাঁড়াবেই।”