এই স্কুলের সামনেই বোমা পড়ে। নিজস্ব চিত্র
স্কুলে চলছে ক্লাস। আচমকা বিকট আওয়াজ। মুহূর্তে ক্লাসঘর-সহ স্কুল চত্বর ভরল ধোঁয়ায়। পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাসঘরেই আটকে থাকলেন তিন শিক্ষিকা। বৃহস্পতিবার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে গলা কাঁপছিল পূর্ব বর্ধমানের গলসির ঢোলা অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকাদের। শেষমেশ পুলিশ দেখে ‘ভরসা’ পান সকলে। ছুটি হয়ে যায় স্কুলও।
শিক্ষিকারা জানান, এ দিন ৪৬ জন পড়ুয়া উপস্থিত ছিল। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা (টিচার ইনচার্জ) পায়েল দেবনাথ বলেন, ‘‘বেলা ১২টা। ক্লাসে পড়াচ্ছিলাম। বিকট আওয়াজে বুঝতে পারি, স্কুলের সামনে বোমা পড়ছে। দেখি হাতে রড, লাঠি হাতে কয়েক জন ছোটাছুটি করছে। ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা কান্না জোড়ে।’’ এর পরে পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাসঘরের দরজা-জানলা আটকে দেন তিন শিক্ষিকা।
প্রায় এক ঘণ্টা এমন ‘দমবন্ধ’ অবস্থা চলার পরে, শোনা যায় দু’টি গাড়ির শব্দ। স্কুল সূত্রে জানা যায়, এক শিক্ষিকা জানলার ফাঁক দিয়ে দেখেন, পৌঁছেছে পুলিশের গাড়ি। ততক্ষণে চলে এসেছেন অভিভাবক মিনা বেগম, আজমিরা বেগমেরা। পায়েলদেবী বলেন, ‘‘পুলিশ দেখে ভরসা পাই। দরজা খুলে বেরোই। বাড়ি ফেরে ছেলেমেয়েরা। আমরাও স্কুল বন্ধ করে বাড়ি ফিরি।’’
বাড়ি যাওয়ার সময়ে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া শেখ সামিম, দ্বিতীয় শ্রেণির শবনূর খাতুনেরা বলে, ‘‘ভাগ্যিস, দিদিমণিরা ছিলেন! খুব ভয় করছিল।’’ ঘটনার পরে অভিভাবকদের ক্ষোভ, ‘‘ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে, স্কুলের সামনে বোমা পড়ছে। গ্রামে অন্তত ৪০টা বোমা পড়েছে। মনে হচ্ছিল, কখন ছেলেমেয়ের মুখ দেখব।’’
কেন এই বোমাবাজি, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তর্জা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবকের অভিযোগ, স্থানীয় লোয়া-রামগোপাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাকিম মল্লিক এবং গ্রামেরই তৃণমূল নেতা হাফিজুর রহমানের মধ্যে কোন্দলের জেরে এই ঘটনা। তৃণমূল সূত্রেও সে দাবির সমর্থন মিলেছে।
এলাকায় হাফিজুর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি (গলসি ১) মহম্মদ মোল্লার এবং ব্লকে দলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি জাহির আব্বাস মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হাকিম। সংশ্লিষ্টেরা অবশ্য কোন্দলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গলসির বিধায়ক তৃণমূলের অলোক মাজি বলেন, ‘‘কী কারণে অশান্তি, খোঁজ নিচ্ছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিক।’’ পুলিশ সুপার (পূর্ব বর্ধমান) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে।’’