প্রতীকী ছবি।
বাজারদরের চেয়ে প্রায় তিন গুণ দামে পথবাতি কিনে এলাকার আলো জ্বালাতে উদ্যোগী হয়েছিল হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের মাজু পঞ্চায়েত! এমনই অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিল ব্লক প্রশাসন।
বিডিও রঞ্জনা রায় বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েতকে চিঠি দিয়ে কিসের ভিত্তিতে এত বেশি দামে পথবাতি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তার রিপোর্ট চেয়েছি। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। আপাতত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের প্রধান কল্পনা হাটুই সব দায় চাপিয়েছেন উপপ্রধানের ঘাড়ে। তাঁর দাবি, ‘‘আমি কিছু জানি না। উপপ্রধানই নির্মাণ সহায়কের সঙ্গে পরামর্শ করে যা কিছু করেছেন। আমি সই করেছি মাত্র।’’ উপপ্রধান জয়ন্ত দাসের দাবি, ‘‘আইন মেনেই কাজ হয়েছে। বিডিও আমাদের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। আমরা রিপোর্ট তৈরি করেছি।’’ আজ, সোমবার ব্লক অফিসে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে বলেও জয়ন্তবাবু জানান।
প্রকল্পের খুঁটিনাটি
• কাজ: মাজু পঞ্চায়েত জুড়ে পথবাতি লাগানো।
• মোট খরচ: ২৮ লক্ষ টাকা।
• টাকার উৎস: চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন।
অভিযোগ
• ৮৪০ টাকার পরিবর্তে ৩০ ওয়াটের এলইডি বাতি কেনা হয়েছে ২৫৩০ টাকা করে।
• ই-টেন্ডার হয়নি। স্থানীয় ভাবে টেন্ডার করে আটটি ঠিকা সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে।
জয়ন্তবাবু আইন মেনে কাজ করার দাবি করলেও ওই অভিযোগকে ঘিরে শুধু পঞ্চায়েত এলাকাই নয়, তোলপাড় চলছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যেও। এই পঞ্চায়েতের কাজকর্ম দেখার জন্য দলের কোর কমিটি আছে। সেই কমিটি অভিযোগটি নিয়ে প্রধান, উপপ্রধানের বক্তব্য জানতে গত শুক্রবার বৈঠক ডেকেছিল। কিন্তু উপপ্রধান না-আসায় বৈঠক ভণ্ডুল হয়ে যায় বলে স্থানীয় তৃণমূল সূত্রের খবর।
তৃণমূলের জগৎবল্লভপুর কেন্দ্রের সহ-সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা খবর পেয়েছি ব্লক প্রশাসন থেকে একটা তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে কী উঠে আসে দেখা যাক। কোনও অনিয়ম প্রমাণিত হলে দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানাব।’’
ব্লক প্রশাসন এবং ওই পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের টাকায় মাজু জুড়ে পথবাতি লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়। বরাদ্দ হয় মোট ২৮ লক্ষ টাকা। সম্প্রতি কাজটি করার জন্য বিভিন্ন ঠিকা সংস্থাকে ‘ওয়ার্ক-অর্ডার’ দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে দু’একটি ঠিকা সংস্থা কাজ শুরু করে। বিতর্ক বাধে তার পরেই।
‘ওয়ার্ক-অর্ডার’ মোতাবেক বিভিন্ন বাড়ির দেওয়াল বা বিদ্যুতের খুঁটিতে একটি করে ৩০ ওয়াটের এলইডি বাতি লাগানোর কথা। অভিযোগ, যে বাতি লাগানোর কথা হয়েছে বাজারে তার এক-একটির দাম ৮৪০ টাকা করে। কিন্তু ঠিকা সংস্থাগুলিকে দেওয়া বরাতে এক-একটি বাতির দাম ধরা হয়েছে ২৫৩০ টাকা করে। অর্থাৎ, প্রায় তিন গুণ বেশি খরচ করা হচ্ছে এক-একটি বাতির জন্য!
ঘটনাটি জানতে পেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশ পঞ্চায়েতে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। তার পরে গত ১৬ জুলাই তাঁরা অভিযোগ করেন বিডিও-র কাছে। তাতে তাঁরা জানান, ই-টেন্ডার না করেই প্রায় আটটি ঠিকা সংস্থাকে বরাত দিয়ে ওই কাজ করা হচ্ছে। মূলত যিনি অভিযোগ করেছেন, সেই তসলিম মিদ্দা বলেন, ‘‘সরকারি টাকা নির্লজ্জ ভাবে নয়ছয় করা হচ্ছে। ওয়ার্ক-অর্ডারে যে সংস্থার যে বাতির কথা বলা হয়েছে, আমরা তার দাম করেছি। সংস্থা আমাদের লিখিত ভাবে জানিয়েছে, দাম ৮৪০ টাকা করে। কিন্তু পঞ্চায়েত দাম ধরেছে ২৫৩০ টাকা করে। আমরা মহকুমাশাসক (হাওড়া সদর), জেলাশাসক এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ জানাব। সরকারি টাকার নয়ছয় মানব না।’’