মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ফাইল চিত্র।
বিজেপির নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় সোমবার কলকাতা হাই কোর্টে রিপোর্ট জমা দিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব। আগামী মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।এই মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন যা নির্দেশ ছিল, তা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে আদালত।
রিপোর্ট-সহ ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ জমা দিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব। কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার তালিকা চাইল হাই কোর্ট। এই মামলায় রাজ্যের তরফে পাল্টা বলা হয়েছে যে, যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁরাই জনস্বার্থ মামলা কী ভাবে করছেন। অকারণে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলেও জানানো হয়। রাজ্যের সওয়াল, যাঁরা সম্পত্তি নষ্ট করবেন, পুলিশকে মারবেন, তাঁদের গ্রেফতার করা হবে না? রাজ্যের তরফে বলা হয় যে, পুলিশের গাড়ি জ্বালানো হয়েছে। অনেক পুলিশ কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও বিজেপির আইনজীবী স্মরজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, যে ৪৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার মধ্যে কলকাতা থেকেই ৭৯ জন। এখনও ধরপাকড় চলছে।
গত মঙ্গলবার রাজ্যে ‘দুর্নীতি’র প্রতিবাদে নবান্ন অভিযান কর্মসূচি করেছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। পদ্ম শিবিরের এই কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে কলকাতা ও হাওড়ায়। সাঁতরাগাছি, হাওড়াময়দানে বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান, কাঁদানে গ্য়াসের ব্যবহার করে পুলিশ। একাধিক কর্মী জখম হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিজেপি। আহত হন বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবীপুরোহিতও। এর পরই পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। তার প্রেক্ষিতে সোমবার স্বরাষ্ট্রসচিবকে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিপ্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ।
এই মামলায় গত মঙ্গলবার, প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, বিজেপির রাজ্য দফতরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্যকে। নবান্ন অভিযানের মিছিলকে কেন্দ্র করে অপ্রয়োজনীয় ভাবে যে কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি, তা-ও রাজ্যকে নিশ্চিত করতে বলেছে হাই কোর্ট। রাজ্যের তরফে সওয়াল করতে গিয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে বলেছিলেন, ‘‘বিজেপির কর্মসূচির নাম ‘নবান্ন অভিযান’। নবান্নের চারিদিকে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। ফলে সেখানে অবৈধ জমায়েত বা মিছিলে পুলিশ বাধা দেবে সেটাই স্বাভাবিক। আন্দোলনকারীদের পুলিশ বার বার পিছিয়ে যেতে বলেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ মিছিলের কথা বলা হচ্ছে। প্রচুর সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। ইট ছোড়া হয়েছে। কলকাতার এমজি রোড, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর হয়েছে। রাস্তার বাতিস্তম্ভ, পুলিশের কিয়স্ক ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি পুলিশকর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন অনেক বেশি পুলিশ। এটাই কি শান্তিপূর্ণ মিছিলের নমুনা? শান্তি বজায় রাখার জন্যই পুলিশ আটক করেছে।’’
প্রসঙ্গত, বিজেপির নবান্ন অভিযানে আক্রান্ত হন এসি দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই ঘটনায় মোট ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পাল্টা সুর চড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমার সামনে যদি কেউ পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিত, পুলিশকে মারত, আমি (নিজের কপালে আঙুল ঠেকিয়ে) তাদের মাথায় শ্যুট করতাম!’’ অভিষেকের এই মন্তব্য ঘিরে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। গত সপ্তাহের শেষে কলকাতায় আসে বিজেপির পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। আহত বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে তাঁরা দেখা করেন। পাশাপাশি অভিষেকের মন্তব্যের সমালোচনায় সরব হন বিজেপি নেতারা।