অর্জুন সিংহ ফিরলেন তৃণমূলে। ছবি: টুইটার থেকে
জল্পনা সত্যি হল। দীর্ঘ তিন বছর বিজেপিতে কাটিয়ে শেষমেশ তৃণমূলে ফিরে এলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ। রবিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি সাংসদ যা বলেছিলেন, তাতে তাঁর ফুল বদলের জল্পনা আরও গতি পেয়েছিল। অতঃপর, রবিবার বিকেলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলে ফিরে এলেন অর্জুন। গত বেশ কয়েক দিন ধরেই বিজেপিতে বেসুরো হয়ে উঠেছিলেন অর্জুন। পাটজাত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মোদী সরকারের বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শোনা গিয়েছিল রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতিকে। তার পর থেকে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব ক্রমেই বেড়েছিল তাঁর। সেই দূরত্ব শেষ পর্যন্ত এতটাই বেড়ে গেল যে, রবিবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করলেন অর্জুন। প্রসঙ্গত, গত শনিবার দুপুরে হিন্দিতে একটি টুইট করেন ব্যারাকপুরের সাংসদ। যার অর্থ এই আবহে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। তিনি লিখেছিলেন, ‘শুনছি আজ সাগর নিজেকে নিয়ে গর্বিত। যেখানে ঝড় এসেছে, সেখানে নৌকা নিয়ে যাওয়া হোক।’ যদিও নিজে বার বার দলবদলের জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন অর্জুন। কিন্তু রবিবারের সাংবাদিক বৈঠকে অর্জুনকে দেখা গিয়েছে ভিন্ন মেজাজে।
সাংবাদিক বৈঠকের কিছু পরে ভাটপাড়া থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন অর্জুন। তখনও অবধি জল্পনা ছিল, দলবদল করতে অর্জুন পা বাড়িয়েছেন অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরের দিকে। কিন্তু নাটকীয় ভাবে পট পরিবর্তন ঘটে। অর্জুনের গাড়ি মোড় নেয় আলিপুরের একটি অভিজাত হোটেলের দিকে। এমনকি সেই হোটেলে ঢুকতেও দেখা যায় অর্জুনকে। সেখানে ঘণ্টা খানেকের বেশি সময় কাটান তিনি। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বলেন, ‘‘এখানে ওঁর এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছে। তিনি বাইরে থেকে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই এসেছেন অর্জুন। ওঁর ক্যামাক স্ট্রিট যাওয়ার কথা আছে কি না, তা আমাদের জানা নেই।’’ এর পর অবশ্য ভিন্ন ছবি দেখা গিয়েছে। বিকেল ৪টে ১৫ নাগাদ হোটেল থেকে বেরোন অর্জুন। সেখান থেকে তিনি পৌঁছে যান ক্যামাক স্ট্রিটে।
অর্জুন ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে পা রাখার আগে অবশ্য সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, আমডাঙার তৃণমূল বিধায়ক রফিকুল রহমান এবং ব্যারাকপুরের বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীও। তৃণমূলের একটি শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেকের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার ওই তৃণমূল নেতাদের ভাটপাড়া এবং ব্যারাকপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেই আলোচনা শেষ হওয়ার কিছু পরেই ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে প্রবেশ করেন অর্জুন। এর পর বেশ কিছু ক্ষণ ধরে ‘সমন্বয়’ বৈঠক হয় অর্জুনের সঙ্গে। এর মাঝেই অবশ্য অর্জুনের ফেসবুক প্রোফাইলের ছবিও বদলে যায়।
২০১৯ সালের ১৪ মার্চ লোকসভা ভোটের আগে দিল্লি গিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অর্জুন। সেই দলবদলের মঞ্চে ছিলেন মুকুল রায়ও। তিন বছরের বেশি সময় কাটিয়ে অর্জুনের প্রত্যাবর্তন ঘটল তৃণমূল শিবিরে। সেই সঙ্গে একটি বৃত্তও সম্পূর্ণ হল।