মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সর্বদল বৈঠকে যোগ দেয়নি বিজেপি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে বিধানসভায় সরকারের তরফে যে প্রস্তাব আলোচনা হবে, তাতে অংশ নিতে পারে বিজেপি। মঙ্গলবার নবান্নে সর্বদল বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় একযোগে ৭ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় এই প্রস্তাব আনার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তার পরেই জল্পনা তৈরি হয়, নবান্নের বৈঠকের পর কী বিজেপির পরিষদীয় দল পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আলোচনাও বয়কট করবে? বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে পারে তারা। এমনকি, সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বক্তৃতা করতে পারেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। সূত্রের খবর, এই আলোচনায় অংশ নিতে বিজেপি পরিষদীয় দলের ভাল বক্তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আলোচনায় পদ্ম শিবিরের সমস্ত বিধায়ককে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আলোচনায় ভোটাভুটিও চাইতে পারেন বিরোধী দলনেতা। বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে বিজেপির রাজনৈতিক অবস্থান বিধানসভায় সাংবিধানিক ভাবে নথিভুক্ত করাতেই বিজেপি এমন কৌশল নিতে পারে তারা। অর্থাৎ, সরকারের আনা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে বিজেপি বিধায়কেরা যে দলের মতকেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, তা যেন বিধানসভার রেকর্ডে নথিভুক্ত থাকে।
উল্লেখ্য, বিজেপির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে যায়নি কংগ্রেস, সিপিএম-সহ বামফ্রন্টের দলগুলি। যে হেতু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বামফ্রন্ট বা কংগ্রেসের কোনও প্রতিনিধি নেই, তাই এ ক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থান জানানোর উপায় নেই। যদিও বৈঠকে যোগ না দিলেও সিপিএমের তরফে পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। একই ভাবে বিজেপিও বৈঠক বয়কট করলেও চিঠি দিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিল।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো সেই চিঠিতে স্পষ্ট ভাষাতেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছিলেন, তাঁর দল ২০ জুন তারিখকেই পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে মান্যতা দিতে চায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় আইন পরিষদে (অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক আইনসভা) অখণ্ড বাংলা ভাগের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। সেই সময়ে বাংলাভাগের পক্ষে বড় অংশের ভোট পড়ায় দু’টুকরো হয় বাংলা। এই ভোটাভুটির ভিত্তিতেই পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ হয়, পূর্ববঙ্গ যুক্ত হয় পাকিস্তানের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো আমন্ত্রণপত্রের কথা উল্লেখ করে সুকান্ত লিখেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস সম্পর্কে খোলা মন নিয়ে আপনি আলোচনার জন্য সর্বদল বৈঠক ডাকেননি। আপনার পূর্বাগ্রহের নিহিত এবং পূর্বাশ্রিত কিছু পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সর্বদলীয় বৈঠকটি ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছেন। এমতাবস্থায় আপনার আগেই নিয়ে ফেলা সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিতে আমি বা আমার দলের কোনও প্রতিনিধি সর্বদল বৈঠকে যেতে অপারগ। তাই আপনার ডাকা সর্বদল বৈঠকে বিজেপি যোগ দেবে না।’’ দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে চিঠির সঙ্গে ২০ জুনের একটি বিস্তারিত ইতিহাসও মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন সুকান্ত। তাতে বলা হয়, ‘‘বাঙালি হিন্দুর হোমল্যান্ড হল পশ্চিমবঙ্গ। যার প্রতিষ্টা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ২০ জুন।’’
২০ জুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করলে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রাজভবনে যেন এমন কোনও দিন উদ্যাপন না করা হয়। ফোন করেও রাজ্যপালকে একই অনুরোধ করেছিলেন মমতা। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে কান না দিয়ে গত ২০ জুন সকাল থেকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে নানা অনুষ্ঠান হয়েছে রাজভবনে। রাজ্যপাল বোসের বক্তব্য ছিল, রাষ্ট্রপতির নির্দেশেই এই দিনটি পালন করছেন তিনি। ওই দিনই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী সকল মানুষের জন্যেই ২০ জুনের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৭ সালে আজকের এই দিনেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বাংলার আইনসভা আমাদের এই রাজ্যকে ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্য হিসাবে নির্ধারিত করার সপক্ষে রায় দিয়েছিলেন।’’