মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
অনেক কুৎসা হচ্ছে। তাতে কান দেওয়া ঠিক নয়। সংখ্যালঘুরা বিভক্ত হলে বিজেপির লাভ। বুধবার দলের সংখ্যালঘু সেলের সংহতি সভায় মোবাইল বার্তায় এ কথাই বললেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক কুৎসা হচ্ছে। তাতে কান দেবেন না। আপনারা বিভক্ত হলে বিজেপির লাভ। আজকে শপথ নেওয়ার দিন। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন।’’
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল। সেই দিনটিকে মনে রেখেই তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেল কলকাতায় সংহতি সমাবেশ করেছে বুধবার। কিন্তু উত্তরবঙ্গ সফরের জন্য মমতা সশরীরে সেই সভায় আসেননি। তিনি ফোনে বক্তৃতা করেন। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মাইকের সামনে সেই ফোন ধরে মমতার কথা শোনান সমাবেশে আসা জনতাকে।
তিন রাজ্যের ভোটের ফল নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ভোট ভাগাভাগির কারণে ওখানে বিজেপি জিতে গিয়েছে। ওটা বিজেপির জয় নয়। একত্রিত থাকলে বিজেপিকে হারানো সম্ভব। বাংলা চায় বিজেপির পরাজয়। বাংলা চেয়ারের জন্য নয়, মানুষকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করবে। আবার খেলা হবে। বিজেপিকে হটাও, বিভেদ দূর করো।’’
সেই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের মধ্যে যাতে কেউ বিভাজন না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন মমতা। তৃণমূল নেত্রী মমতা বলেন, ‘‘ধর্মস্থানকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু কেউ কেউ ধর্মস্থানের নাম করে ভুল বোঝাচ্ছে।’’ রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, নাম না করলেও মমতা আসলে নিশানা করতে চেয়েছেন ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা তথা আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে। নওশাদ বেশ কয়েক দিন ধরেই বলছেন, তাঁর দল চাইলে তিনি ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে লড়বেন। আবার পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকিও সম্প্রতি বলেছেন, তিনি ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী দেবেন। উল্লেখ্য, পুজোর আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মমতা যে ইমাম-মোয়াজ্জেমদের নিয়ে সভা করেছিলেন, সেখানেও তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি চাই না ফুরফুরা শরিফ রাজনীতি করুক। যেমন চাই না বেলুড় মঠ রাজনীতিতে যুক্ত হোক।’’
একটা সময়ে বাংলায় সংখ্যালঘু ভোটে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল বামেদের। কিন্তু ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে থেকেই তা ধসতে শুরু করে। ২০০৯ সালের লোকসভা থেকে সেই ভোটের বাক্সবদল হয়। বামেদের দিক থেকে চলে যায় তৃণমূলের দিকে। অনেকের মতে, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের পুঁজিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের হারের পরেই আলোচনা শুরু হয়েছিল, তা হলে কি সংখ্যালঘু ভোট ফের বাক্সবদল করছে? যদিও তার পরেই মমতা সাংগঠনিক পদক্ষেপ করে দলের সংখ্যালঘু সেলের নেতৃত্ব বদল করেন। সভাপতি করা হয় ইটাহারের তরুণ বিধায়ক মোশারফ হোসেনকে। তার পর থেকে পৃথক ভাবে গণসংগঠন হিসেবে তাঁরা একাধিক কর্সসূচি করেছে। বুধবার মমতা বার্তা দেন, সংখ্যালঘুদের ঐক্যবদ্ধ থাকার। এ-ও বুঝিয়ে দেন, না হলে বিজেপি লাভবান হবে।