Statue

গেরুয়া শিবিরের হাতিয়ার রাজমূর্তি

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০ ০০:৪৫
Share:

নরসিংহ মল্লদেবের সেই মূর্তি। 

ঝাড়গ্রামের শেষ রাজা তথা ঝাড়গ্রামের প্রথম সাংসদ তিনি। অনেকে তাঁকে আধুনিক ঝাড়গ্রামের রূপকারও বলেন। সেই নরসিংহ মল্লদেবের ব্রোঞ্জের পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরি হলেও শহরে বসানো হয়নি।

Advertisement

অভিযোগ, নবান্নের আপত্তিতেই মূর্তিটি তিন বছরেও বসানো হয়নি। রাজবাড়ি চত্বরের একটি চালকলের স্টোর রুমে পড়ে রয়েছে মূর্তিটি। সেই মূর্তি নিয়ে এবার সরগরম হয়ে উঠেতে চলেছে ঝাড়গ্রামের রাজনীতি। বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে তৃণমূলকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে ওই মূর্তি বসানোর দাবিতে আন্দোলনে নামছে গেরুয়া শিবির।

বিজেপি-র জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘নরসিংহের মূর্তি তৈরি করেও তাঁর দুর্গেশ মল্লদেব চেয়ারম্যান থাকাকালীন শহরে সেই মূর্তি বসাতে পারেননি। এটা অত্যন্ত লজ্জার। তাঁকে মর্যাদা দিয়ে পাঁচ মাথার মোড়ে মূর্তি বসানোর দাবিতে আন্দোলন হবে।’’

Advertisement

ঝাড়গ্রামের মল্লদেব রাজবংশের শেষ রাজা ছিলেন নরসিংহ। ঝাড়গ্রামে ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি হাসপাতালের গড়ার ক্ষেত্রে জমি ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন তিনি। স্বাধীন ভারতে তিনি ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের মনোনীত ঝাড়গ্রামের প্রথম সাংসদ। ওই সময় ঝাড়গ্রাম সংসদীয় ক্ষেত্রটি আদিবাসী সংরক্ষিত ছিল না। নরসিংহের নাতি দুর্গেশ মল্লদেব রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তৃণমূল পরিচালিত ঝাড়গ্রাম পুরসভার পুরপ্রধান ছিলেন দুর্গেশ।

দুর্গেশ পুরপ্রধান থাকাকালীনই বিভিন্ন মহল থেকে অরণ্যশহরে রাজা নরসিংহের মূর্তি বসানোর দাবি ওঠে। রাজ পরিবারের সহযোগিতায় একটি বেসরকারি ট্রাস্টের উদ্যোগে ২০১৭ সালে মূর্তি তৈরি হয়। কৃষ্ণনগরের ভাস্কর সুবীর পাল নরসিংহের পূর্ণাবয়ব ব্রোঞ্জের মূর্তিটি তৈরি করেন।

ঝাড়গ্রাম পুরসভা সূত্রের খবর, মূর্তিটি শহরের কেন্দ্রস্থল পাঁচমাথার মোড়ে বসাতে চেয়েছিলেন দুর্গেশ। কিন্তু নবান্নের শীর্ষস্তরের আপত্তিতে মূর্তিটি সেখানে বসানো যায়নি। ২০১৮-র ডিসেম্বরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পুরসভা এখন প্রশাসকের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

নরসিংহের মূর্তি বসাতে না পারায় রাজ পরিবারের অন্দরেই তুমুল ক্ষোভ রয়েছে। দুর্গেশ অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর ভাই জয়দীপ মল্লদেব বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামের রূপকার নরসিংহ মল্লদেবের এমন অপমানে আমরা খুবই ব্যথিত। নরসিংহের প্রতি এই অপমান ঝাড়গ্রামবাসী মেনে নেবেন না। শুনেছি নবান্নের শীর্ষ মহলে কেউ নালিশ করায় মূর্তি পাঁচ মাথা মোড়ে বসানোর বিষয়টি স্থগিত করা হয়।’’

জয়দীপের দাবি, রাজ পরিবার বরাবরই স্থানীয় আদিবাসী-মূলবাসীদের স্বার্থে কাজ করে এসেছে। তাই আদিবাসীদের কেউ এমন আপত্তি করেছেন, এ কথা তাঁরা বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, ঠাকুর্দার হস্তক্ষেপেই ঝাড়গ্রাম আসনটি আদিবাসী সংরক্ষিত হয়েছিল।’’

দুর্গেশের ছেলে বিক্রমাদিত্য গত বছর বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। চলতি বছরের গোড়ায় তিনি পুরনো দলে ফেরেন বলে জেলা তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছিল। সেই বিক্রমাদিত্য বলছেন, ‘‘মূর্তিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হলে খুশি হবো।’’ তবে বিজেপি যে মূর্তি নিয়ে আন্দোলন করতে চলেছে সে বিষয়ে অবশ্য রাজ পরিবারের সদস্যরা মন্তব্য করতে চাননি। তৃণমূল অবশ্য বিজেপির হুঁশিয়ারিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘বিজেপি সব সময়ই মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার রাজনীতি করছে।’’

ঝাড়গ্রাম পুর-প্রশাসক সুবর্ণ রায় বলেন, ‘‘পাঁচমাথা মোড় বাদে শহরের অন্য যে কোনও জায়গায় মূর্তিটি বসানোর জন্য রাজ পরিবারের কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাব এলেই তা বিবেচনা করে পদক্ষেপ করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement