RSS and BJP

সঙ্ঘের পত্রিকায় অভিষেক সম্পর্কিত নিবন্ধে বিজেপির উল্টো অভিমত, শুভেন্দুর বিরোধী সুরে অস্বস্তি পদ্মে

আরএসএসের বাংলা মুখপত্রে প্রকাশিত নিবন্ধ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ওই নিবন্ধে যা লেখা হয়েছে, তা আদৌ বিজেপির দলীয় বক্তব্য নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:০১
Share:

দ্বিমত নিয়ে বিতর্ক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রাজ্যে নানা দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত নিয়ে বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) নীতি কি আলাদা? এমনই প্রশ্ন তৈরি করে দিয়েছে সেপ্টেম্বরের শেষে প্রকাশিত সঙ্ঘের পত্রিকা ‘স্বস্তিকা’-র একটি নিবন্ধ। রাজ্য বিজেপির নেতারা যখন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের দাবিতে এ বেলা-ও বেলা মুখ খুলে চলেছেন, তখন সঙ্ঘের মুখপত্রে ঠিক উল্টো দাবি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘এটা ঠিক অনেকের কাছে মূল সমস্যা, অভিষেক কেন জেলের বাইরে? এটা অবান্তর চিন্তা। তদন্তকারীদের মতে গ্রেফতার তদন্তের একটি অংশ। পুরো তদন্ত নয়। মনে হয় এই একমুখী ভাবনা এখানকার বিরোধীদের সত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে।’’

Advertisement

এই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিতর্কের মুখে গেরুয়া শিবির। যে সংগঠনের আদর্শ নিয়ে দল চলে সেই আরএসএসের বক্তব্য জানার পরে নিচুতলার কর্মীরা কী বুঝবেন, তা নিয়ে চিন্তিত অনেক বিজেপি নেতা।

ঘটনাচক্রে, এই বিতর্ক এমন একটা সময়ে তৈরি হয়েছে যখন স্বস্তিকার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কলকাতায় এসেছেন আরএসএসের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেলুড়ে ‘স্বস্তিকা’-র একটি অনুষ্ঠানে হাজির থাকার কথা ভাগবতের। যদিও ‘স্বস্তিকা’ কর্তৃপক্ষ এবং ওই লেখক এই নিবন্ধ নিয়ে খুব ‘চিন্তিত’ নন। প্রবন্ধের লেখক নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমার লেখা প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পরে তা নিয়ে আমার কিছু বলা মানায় না। যা বলার পত্রিকার পক্ষেই বলা হবে।’’ আর ‘স্বস্তিকা’র সহ-সম্পাদক সুকেশচন্দ্র মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘আমাদের একটি লেখা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। তবে তা অবান্তর। স্বস্তিকায় যে কোনও লেখার ক্ষেত্রে লেখকের মতামতের স্বাধীনতা থাকে। সেই মতোই লেখক লিখেছেন। এর সঙ্গে কোনও তদন্তকে প্রভাবিত করা বা দুর্নীতিকে সমর্থন করার প্রশ্ন নেই।’’

Advertisement

সঙ্ঘের পত্রিকায় এমন একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়ায় তা নিয়ে প্রকাশ্যে বিজেপি নেতারাও কিছু বলতে চাইছেন না। তবে দলের ভিতরে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। লেখাটি নেতা থেকে কর্মীদের মোবাইলে মোবাইলে হোয়াট্‌সঅ্যাপে ঘুরছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করা হলেও লেখার একটি অংশে সরাসরি তাঁরই সমালোচনা করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। লেখা হয়েছে, ‘‘রাজ্য জুড়ে সারা দিন কীর্তনের মতো বেজে চলেছে— পিসি-ভাইপো চোর।’’ প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর মুখে সব সময়েই এই স্লোগান শোনা যায়। একই কথা বলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তবে এই নিবন্ধ প্রসঙ্গে সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘স্বস্তিকা একটি স্বাধীন পত্রিকা। সেখানে এক জন লেখক তাঁর স্বাধীন মত প্রকাশ করেছেন। তা নিয়ে সাধারণ মানুষের চাওয়া বদলাবে না। আমাদের দাবিও নয়। আমরা মনে করি, তদন্তের স্বার্থে যা যা পদক্ষেপ দরকার, সব করা উচিত।’’

সুকান্ত এমন কথা বললেও বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন মিলিয়ে যাচ্ছে না। কারণ, নিবন্ধের শিরোনামেও রয়েছে বিজেপির প্রতি কটাক্ষ। ‘অভিষেক আটক ইন্দ্রিয়সুখ না রাজনৈতিক প্রয়োজন? অবোধের গোবধে আনন্দ’ শীর্ষক নিবন্ধে এমনও লেখা হয়েছে যে, ‘‘অনেকের কাছে অভিষেকবাবুর যেন-তেন প্রকার আটক ইন্দ্রিয়সুখের শামিল। কেন তিনি আটক হবেন, নির্দিষ্ট ভাবে তাঁরা জানেন না। বিষয়টি তদন্তকারী সংস্থাগুলির আওতাধীন। এটা কেবল তাঁদের ইচ্ছা।’’ এখানেই শেষ নয়, ওই নিবন্ধে এমনও দাবি করা হয়েছে যে, অভিষেকের বিরুদ্ধে কিছু ‘অসংলগ্ন উল্লেখ’ ছাড়া খাতায়কলমে কোনও অভিযোগ নেই।

এই প্রসঙ্গেই বিরোধী দলনেতা ‘হতাশায়’ রয়েছেন বলেও প্রকারান্তরে বলা হয়েছে ওই নিবন্ধে। লেখা হয়েছে, ‘‘ইডি, সিবিআই নিয়ে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হতাশাকে তাই মান্যতা দিতেই হবে। তার মানে এই নয় যে, তদন্তকারীরা তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন বা উঁচুতলার রাজনৈতিক চাপে ভেঙে পড়েছেন। এ সব আজগুবি তত্ত্ব? অন্য নাম ‘সেটিং’। সন্দেহ নেই অভিষেকবাবুর গ্রেফতার বা আটক এই মুহূর্তে রাজ্যের সবচাইতে আলোচিত বিষয়।’’ এর পরে এ-ও লেখা হয়েছে যে, ‘‘আমার মনে হয় আটক বা গ্রেফতারির উপর বেশি গুরুত্ব না দেওয়াটাই রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি সমীচীন।’’

এমন বক্তব্য কি সঙ্ঘ পরিবার সমর্থন করে? এমন প্রশ্নই উঠেছে বিজেপি অন্দরে। নিচুতলার কর্মীরাই শুধু নন, রাজ্য স্তরের নেতারাও একই প্রশ্ন তুলছেন। এমনই এক নেতার কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, সম্পাদকমণ্ডলী খেয়াল করে দেখেনি কী প্রকাশিত হতে চলেছে। লেখকের নাম দেখেই ভরসা করার ফল! ভিতরে সাপ না ব্যাঙ, সেটা দেখা উচিত। কারণ, মুখপত্রে প্রকাশিত নিবন্ধ সংগঠনের বক্তব্য হিসাবেই মনে করা হয়।’’ সেটা স্বাভাবিক। কারণ, ‘স্বস্তিকা’র ২৫ সেপ্টেম্বরের সংখ্যায় প্রথম নিবন্ধই এটি। সম্পাদকীয়ের পরের পাতাতেই রয়েছে ‘অবোধের গোবধে আনন্দ’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement