ছবি: এএফপি।
বছর ঘুরলে ভোট বঙ্গে। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের ‘পাখির চোখ’ এ রাজ্য। আজ সে রাজ্যেই রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বারবার বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাস্ত করে রাজ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আসন দখল করবে বিজেপি।
অমিত শাহের সব দাবি যে মিলেছে, এমন নয়। কিন্তু এই দাবি মেলানোর অঙ্কটি কী? মমতাকে নিয়েই বা বিজেপির কৌশল কী?
বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতাকে এই প্রশ্নটি করতে উত্তর দিলেন, ‘‘এক কথায় বলি? নাগরিকত্ব আইনকে সামনে রেখে যতটা সম্ভব হিন্দু ভোটকে সঙ্গে রাখা আর মমতার মুসলিম ভোট ভাগ করা।’’
আজ দুপুরের পরে কলকাতায় পা রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ঠিক গত কাল রাতেই মোদী সরকার চালু করে দিয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। বুঝিয়ে দিয়েছে বিরোধ যতই থাক, এক ইঞ্চি পিছু হটেন না নরেন্দ্র মোদী। মোদীর বিরোধিতায় আজ যে কলকাতা মুখর থাকবে তা জেনেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সকাল থেকে আজ বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কলকাতা সফরের সঙ্গে ‘ধর্ম’-কে জুড়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: চাকরির দাবিতে পোস্টার হাতে সাতাত্তরের বৃদ্ধ
বিজেপির তথ্য প্রযুক্তি সেলের প্রধান অমিত মালব্য যেমন বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গিয়েছেন বাংলায়। আর কাল রাতে সিএএ-র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান অথবা বাংলাদেশে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন লক্ষ লক্ষ হিন্দু। নরেন্দ্র মোদী এই হিন্দু বাঙালিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’ মোদী নিজেও সফর ঘিরে উত্তাপ বাড়িয়েছেন। প্রথমে ইংরেজি, পরে বাংলায় টুইট করেছেন। বেলুড় মঠ কেন ‘বিশেষ’, জানিয়েছেন। রাতে মঠের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে তাঁর ছবিও পোস্ট করেছেন মোদী।
বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘মমতা আসলে এখন চাপে রয়েছেন মুসলিম ভোট ভাগ হওয়ার আশঙ্কায়। যেটি তাঁর আসল পুঁজি। এক দিকে আসাদুদ্দিন ওয়াইসি মুসলিমপ্রধান এলাকায় ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। যে ওয়াইসিকে বিজেপির বন্ধু প্রতিপক্ষ বলে কটাক্ষ করেন বিরোধীরা। তার উপরে বন্ধের দিন কংগ্রেস ও বামেদের পক্ষে সমর্থনেও ভয় পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। আসলে মুসলিম ভোট যত ভাগ হবে, তত লাভ বিজেপির।’’ যার ফলে কংগ্রেস ও বামেদের বিরুদ্ধে মমতা গুন্ডামির অভিযোগ তোলার পরেই বিজেপি তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দাবি করে, মমতা আসলে অখণ্ড মুসলিম ভোট পেতে চান। বিজেপি নেতাদের মতে, বামেদের পক্ষে সমর্থন কিছুটা বাড়ায় মমতার আশঙ্কা বেড়েছে। তাই সনিয়া গাঁধীর ডাকা বিরোধীদের বৈঠকে না যাওয়ার কথা বলে তিনি কংগ্রেসকে বাম-সঙ্গ ত্যাগের সঙ্কেত দিতে চেয়েছেন।
বঙ্গ-রাজনীতির ক্ষেত্রেও বিরোধী শিবিরে চিড় ‘লাভজনক’ বলে মনে করছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। সনিয়া গাঁধীর ডাকা বিরোধীদের বৈঠকে না যাওয়ার কথা ঘোষণা করে মমতা নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করতেই রাজ্যে বিরোধীরা ‘দিদিভাই-মোদীভাই’ আঁতাতের অভিযোগ তুলছেন। দুর্নীতির নানা অভিযোগের হাত থেকে বাঁচতে ‘সেটিং’ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন তাঁরা। কিন্তু বিজেপির মতে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার বৈঠক উভয়ের জন্যই ভাল। সিএএ, এনপিআর রাজ্যের মাধ্যমেই কার্যকর করতে হবে কেন্দ্রকে। ফলে কেন্দ্র-রাজ্য ‘মুখ দেখাদেখি বন্ধ’-এর পরিস্থিতিতে পৌঁছনোর কোনও মানে নেই বলে মত বিজেপি নেতাদের।