রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকে গত এক বছর ধরে রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে সরব বিজেপি। আদালতের নির্দেশে সেই অভিযোগ নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত করছে সিবিআই-ও।
সরকার ভেঙে ৩৫৬ ধারা জারির কথা তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে ফের ৩৫৬ ধারা জারির হুমকি দিল রাজ্য বিজেপি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বার সরকার গঠন করেছেন এক বছরও হয়নি। তার মধ্যেই সেই সরকার ভেঙে ৩৫৬ ধারা জারির কথা তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আইশৃঙ্খলার প্রশ্নে ফের এই প্রসঙ্গ সামনে এনে রবিবার তিনি বলেছেন—এমন ভাবে রাজ্য চললে রাজ্যে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে কেন্দ্রীয় সরকার। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বিজেপির এই অবস্থানকে ‘হতাশার আস্ফালন’ বলেই চিহ্নিত করেছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করলেও ৩৫৬-এর দাবিকে সমর্থন করেনি বাম এবং কংগ্রেস।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকে গত এক বছর ধরে রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে সরব বিজেপি। আদালতের নির্দেশে সেই অভিযোগ নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত করছে সিবিআই-ও। এই অভিযোগ ফিরে এসেছে সদ্যসমাপ্ত পুরভোটের সময়। পুরভোটের পরে দুই কাউন্সিলরের খুনের ঘটনা নিয়েও চাপে পড়েছে শাসকদল। এই অবস্থায় শনিবার বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের উপর হামলার অভিযোগ সামনে আসার পরই ফের ৩৫৬ ধারার দাবি সামনে এনেছেন সুকান্ত। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ৩৫৬ ধারা জারি করার পথে হাঁটতে কেন্দ্রীয় সরকারকে বাধ্য করছে।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে বিজেপির এই দাবিকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলেই মনে করছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘একের পর এক নির্বাচনে পরাজয় থেকে বিজেপি নেতাদের মধ্যে হতাশা জন্মেছে। এখন কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে আস্ফালন করা ছাড়া আর কিছু করার নেই তাঁদের।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ ওদের (বিজেপিকে) প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন পিছনের দরজা দিয়ে ঢোকার ষড়যন্ত্র করছে। ভুলে গেছে, পশ্চিমবঙ্গ শক্ত মাটি। তা ছাড়া দেশে আইন- আদালত আছে।’’
আইশৃঙ্খলার প্রশ্নে রাজ্যে শাসক-বিরোধী চাপানউতোর নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক অতীতে তা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে বিজেপি। বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে ৩৫৬ ধারা বা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি তুলে শাসক তৃণমূলকে জোড়া তিরে বিদ্ধ করতে চাইছে বিজেপি। গত সপ্তাহেই রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে নিজের বক্তৃতায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ করে রাজ্যে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই রেশ রেখেই এ দিন সুকান্ত বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে যে ভাবে পুলিশ প্রশাসনকে তৃণমূল দলীয় কাজে ব্যবহার করছে তা সত্যিই নজিরবিহীন।’’ এই প্রসঙ্গে কটাক্ষের সুরে তাঁর ‘পরামর্শ’, ‘‘উত্তরপ্রদেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্য প্রশাসন পরিচালন করা উচিত এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর।’’ উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে পাল্টা খোঁচা দিয়ে ফিরহাদের মন্তব্য, ‘‘ওখানে তো গব্বর সিংয়ের রাজত্ব চলছে। গণতন্ত্র বলে কিছু নেই।’’ এই প্রসঙ্গেই উত্তরপ্রদেশের হাথরস, উন্নাওয়ের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন মন্ত্রী।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করলেও তাঁরা যে কখনওই ৩৫৬ ধারা জারি করার দাবির পক্ষে নন, তা উল্লেখ করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যে যে অশান্তি, লুটতরাজ চলছে, তার জন্য তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপিও দায়ী। আর সব সময়ে দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের টুইট-যুদ্ধ। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে শাসন ভার নিয়ে ৩৫৬ ধারা বলে রাজ্যপালের হাতে দিলেই সব ভাল হয়ে যাবে?’’ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর জায়গায় গিয়েছে। পুলিশ- প্রশাসন উদাসীন, নয়তো পক্ষপাতদুষ্ট। কিন্তু কংগ্রেস কখনওই ৩৫৬ ধারা চাইবে না। কংগ্রেস ৩৫৬ ধারার পক্ষপাতী নয়।’’