State News

ধাক্কায় বোধোদয়? বৈঠকে বসতে চেয়ে শোভন-বৈশাখীকে ফোন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতাকে সঙ্গে রাখতে পারলে কলকাতায় তৃণমূলের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে লড়ার লক্ষ্যে বিজেপি অনেকটা এগোতে পারত বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই বিশ্বাস।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:১৭
Share:

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফ থেকে যে তাঁরা ফোন পেয়েছেন, সে কথা শোভন-বৈশাখী স্বীকার করেছেন। —ফাইল চিত্র।

ধাক্কা খেতেই ঘোর কাটল বিজেপির। জেতা জমি হাত থেকে ফস্কে যেতেই নড়েচড়ে বসলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পুরসভা নির্বাচনের আগে ঘর গুছিয়ে নিয়ে সর্বশক্তিতে ঝাঁপানোর তোড়জোড় শুরু করতে ফোন গেল শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বৈঠকে বসতে চান তাঁদের সঙ্গে— এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। তবে অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাঁরা বৈঠকে বসবেন, এমন নিশ্চয়তা শোভন শিবির থেকে দেওয়া হয়নি।

Advertisement

মঙ্গলবার বিজেপির দু’জন কেন্দ্রীয় নেতার তরফ থেকে শোভন-বৈশাখীর কাছে ফোন গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। সমস্যা যা তৈরি হয়েছে, তা কথা বলে মিটিয়ে নেওয়ার জন্যই যে বৈঠকে ডাকা হচ্ছে— সে বার্তাও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা শোভনদের দেন বলে খবর।

চলতি বছরের ১৪ অগস্ট বিজেপিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। যোগদান করেছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু দু’সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা এক কেন্দ্রীয় নেতাকে জানিয়ে দেন যে, দল ছাড়তে চান। রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে মন কষাকষির কারণেই যে ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা শোভন বা বৈশাখী গোপন করেননি। উল্টো দিকে খোদ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও নানা মন্তব্যে বোঝাতে চেয়েছিলেন, শোভন-বৈশাখী অপরিহার্য নন বিজেপির জন্য।

Advertisement

আরও পড়ুন: বুলবুল-ত্রাণে এখনও এক পয়সাও দেয়নি কেন্দ্র, অভিযোগ মমতার

এই ঘটনাপ্রবাহের পরে যে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি ছাড়ার কথা শোভনরা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, তা নয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে ভাইফোঁটা নিয়ে বা তাঁর আমন্ত্রণে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে শোভন-বৈশাখী বার্তা দিচ্ছিলেন যে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব কমছে।

সামনেই পুর নির্বাচন প্রায় গোটা রাজ্যে। কলকাতা পুরসভার নির্বাচনও হবে একই সঙ্গে। কিন্তু কলকাতায় বিজেপির সংগঠনের যা পরিস্থিতি, তাতে তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর নেওয়ার সামর্থ কতটা রয়েছে, সে বিষয়ে বিজেপি নেতাদেরও সংশয় রয়েছে। অথচ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই কলকাতায় ভাল ফলাফল করতে পারা যে জরুরি, তা-ও বিজেপি নেতারা জানেন।

আরও পড়ুন: ডায়মন্ড হারবারের যুব নেতাদের নিরাপত্তা দেবে নবান্ন

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতাকে সঙ্গে রাখতে পারলে কলকাতায় তৃণমূলের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে লড়ার লক্ষ্যে বিজেপি অনেকটা এগোতে পারত বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই বিশ্বাস। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে পাওয়া বিপুল সাফল্য সম্ভবত বিজেপি নেতৃত্বের একাংশকে সে উপলব্ধিতে পৌঁছতে দেয়নি। যত বড় নামই হন, কেউই অপরিহার্য নন, এই বার্তা দিতেই বরং রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

কালিয়াগঞ্জ, করিমপুর এবং খড়্গপুর সদরের উপনির্বাচনে যে ধাক্কা বিজেপি খেয়েছে, তার পরে কিন্তু অন্য ভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে সংগঠন। তোলপাড় শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। তৃণমূল থেকে বিজেপি যোগ দেওয়া বড় নামগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। সে তালিকায় মুকুল রায় থেকে শুরু করে সব্যসাচী দত্ত পর্যন্ত নানা স্তরের নেতারা রয়েছেন। শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বার বার ফোনও সেই প্রক্রিয়ারই অঙ্গ বলে বিজেপির একটি অংশের ব্যাখ্যা।

মুকুল রায় বা সব্যসাচী দত্তর সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের কোনও দূরত্ব তৈরি হয়নি। ফলে চট করে তাঁদের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপির কোনও কর্মসূচিতেই যান না। বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও শোভন নিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব যে আর ভাবতেই রাজি নন, তেমন বার্তা দেওয়াই বরং শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে এখন আচমকা তাঁর গুরুত্ব বা দায়িত্ব বাড়ানোর চেষ্টা হলেই শোভন সে দায়িত্ব নেবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফ থেকে যে তাঁরা ফোন পেয়েছেন, সে কথা এ দিন শোভন-বৈশাখী স্বীকার করেছেন। কিন্তু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বৈঠকে আমার যাওয়ার তো প্রয়োজন নেই। আমি রাজনীতিক হিসেবে তুচ্ছাতিতুচ্ছ। আমার সঙ্গে বৈঠক করে বিজেপির মতো বিরাট দলের খুব একটা লাভ হবে বলে মনে করি না। আর শোভন চট্টোপাধ্যায় বৈঠকে যাবেন কি না, সেটা তিনি নিজেই স্থির করবেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

বৈশাখীর কথায়, ‘‘রাজনীতিতে যত দূর ওঠা যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই প্রায় ততটা দূরত্ব স্পর্শ করে এসেছেন। বিজেপির কাছ থেকে তাঁর নতুন করে কিছু পাওয়ার ছিল না। শুধু সম্মানের সঙ্গে রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে যে ভাবে বার বার অসম্মানিত করা হয়েছে, তাতে তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আর বৈঠকে বসতে চাইবেন কি না, আমার সত্যিই জানা নেই।’’

তা হলে কি তৃণমূলে ফেরার সিদ্ধান্তই পাকা? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দূরত্ব গত কয়েক মাসে যে ভাবে কমেছে, তার পরে কি আর বিজেপি-কে নিয়ে ভাবতে শোভন রাজি নন? এ সব প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু তৃণমূলে ফিরলেই যে যথেষ্ট সম্মান শোভনরা আবার পাবেন, তেমন ইঙ্গিতও কিন্তু কলকাতার প্রাক্তন মেয়র এখনও পাননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement