মাঘ মাসের শুরু থেকেই চরম ব্যস্ততা শুরু রাজ্য বিজেপির। ছবি: প্রতীকী
সংক্রান্তি কাটার অপেক্ষা। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং লোকসভা ভোটের জন্য মাঘের শুরু থেকেই কোমর বাঁধছে বিজেপি। ১৬ এবং ১৭ জানুয়ারি দিল্লিতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। সেখানে যোগ দেবেন রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব। ফিরে এসেই রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু করে দেবেন তাঁরা।
আপাতত ঠিক হয়েছে, ২০ এবং ২১ তারিখ সেই বৈঠক হবে। ওই বৈঠকেই স্থির হবে পরবর্তী পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল। তার আগে ১৯ জানুয়ারি রাজ্যে আসার কথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার। ঘটনাচক্রে, মাঘেই এ রাজ্যে আসছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবতও। কলকাতায় পাঁচ দিন থাকার কথা তাঁর। করার কথা জনসভাও। সব মিলিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই মাঘ মাসটা কাটতে চলেছে রাজ্য বিজেপির।
বিজেপির সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শেষ হলে তার সাত দিনের মধ্যে রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক করতে হয়। তবে এ বার আর বেশি সময় নষ্ট করতে চাইছে না বিজেপি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক শেষ করে কাজ শুরু করে দিতে চাইছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই ২০ জানুয়ারি থেকে রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক। এ বার সেই বৈঠক হওয়ার কথা দুর্গাপুরে। ২০ জানুয়ারি, বৈঠকের প্রথম দিন রাজ্যের পদাধিকারীরা বৈঠক করবেন। সে দিন উপস্থিত থাকবেন প্রায় ৫০ জন। পরের দিন, ২১ জানুয়ারি রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক। সেখানে যোগ দেবেন প্রায় ৩০০ জন।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি কতটা হয়েছে, তা কর্মসমিতির বৈঠকেই খোঁজ নেবেন শীর্ষ নেতৃত্ব। পাশাপাশি নজরে থাকবে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি। এ রাজ্যে বিজেপি পুরনো আসন ধরে রাখার পাশাপাশি গত লোকসভা ভোটে হেরে যাওয়া ১৯টি আসনে ভাল ফল করার লক্ষ্য নিয়েছে। সেই লক্ষ্যপূরণের জন্য কতটা প্রস্তুতি হয়েছে, তা-ও বৈঠকে খতিয়ে দেখা হবে। সে কারণেই ২০-২১ তারিখের বৈঠক পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটের জন্য জরুরি।
কর্মসমিতির বৈঠকের আগেও বসে থাকছে না রাজ্য বিজেপি। মকর সংক্রান্তি শনিবার। সোমবার, ১৬ জানুয়ারি থেকেই বিজেপি ‘শুভদিন’-এর চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করছে। আপাতত ঠিক হয়েছে, ১৯ জানুয়ারি রাজ্যে এসে আরামবাগ এবং কৃষ্ণনগরে দু’টি সভা করবেন নড্ডা। দু’টি সভার মাঝখানে কলকাতায় শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে কোর কমিটিকেও ডাকা হতে পারে। নড্ডার সফরে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও (সুনীল বনসল, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে, সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় এবং আশা লাকড়া) উপস্থিত থাকবেন। তার পর তাঁরা রাজ্যে থেকে যাবেন। ২০ এবং ২১ তারিখ তাঁরা রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে যোগ দেবেন।
রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক শেষ হলে পরের সাত দিনের মধ্যে প্রত্যেকটি জেলায় জেলা কর্মসমিতির বৈঠক করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। প্রসঙ্গত, রাজ্যে যতগুলি লোকসভা কেন্দ্র, বিজেপির ততগুলি সাংগঠনিক জেলা। ওই সব জেলাতেই হবে কর্মসমিতির বৈঠক। সেখানে জেলা নেতৃত্বের পাশাপাশি থাকবেন রাজ্য নেতৃত্বও।
বিজেপির নিয়ম অনুযায়ী কর্মসমিতির বৈঠকে দু’টি প্রস্তাব আনা হয়। একটি রাজনৈতিক এবং একটি অর্থনৈতিক। এ বার রাজ্যস্তরে সেই প্রস্তাব কেমন হবে, সেটি নির্ভর করছে ১৬ এবং ১৭ তারিখের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে কী প্রস্তাব আনা হয়, তার উপর। এখনও পর্যন্ত বিজেপি সূত্রে যা জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে সরকারের আর্থিক অবস্থা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করছেন রাজ্য নেতৃত্ব। ওই রিপোর্টের পাশাপাশি আগামী বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্ব রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা, আবাস যোজনা দুর্নীতি নিয়েও একটি রিপোর্ট পেশ করতে পারেন।
২০২৩ সালে মোট পাঁচ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলায় আসার কথা। রাজ্যের পাঁচটি জায়গায় জনসভা করবেন তিনি। সবটাই লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে। নড্ডা এবং শাহ এ বছর রাজ্যে প্রায় ২০টি সভা করবেন। প্রধানমন্ত্রী কোথায় সভা করলে ভাল হয়, তা-ও স্থির হবে রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে।
কর্মসমিতির পাশাপাশি ভাগবতের সভা ঘিরেও রাজ্য বিজেপি ব্যস্ত থাকবে। ১৮ জানুয়ারি কলকাতায় আসছেন আরএসএস প্রধান। কলকাতায় থাকবেন পাঁচ দিন। ২৩ জানুয়ারি শহিদ মিনারে ভাগবতের সভা। ২৬ জানুয়ারি সরস্বতী পুজো। ২৭ জানুয়ারি মোদীর ‘পরীক্ষা পে চর্চা’। তাতে পরীক্ষার্থীদের পরামর্শ দেবেন মোদী। এ রাজ্যেও বিভিন্ন জায়গায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে সেই কর্মসূচি দেখানো হবে। রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক শেষে তা নিয়েও প্রচার করবেন বিজেপি কর্মী এবং সমর্থকেরা। তাই গোটা মাঘ মাস জুড়েই থাকবে বিজেপির কর্মব্যস্ততা।