রবিবার কলকাতায় আসছেন সুনীল বনসল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গেরুয়া শিবিরে বিস্তারক নিয়োগ চেনা পথ হলেও এ বার সেই কাজটাই হতে চলেছে অচেনা নিয়মে। ২০১৯ সালের লোকসভা বা ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে আগেও রাজ্যের সর্বত্র বিস্তারক নিয়োগ হয়েছিল। তবে এ বার তা হচ্ছে না। ২০২৪ সালের ভোটকে পাখির চোখ করতে ২০২২ সালের অক্টোবরেই শুরু হয়ে গিয়েছে উদ্যোগ। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, দ্রুত বিস্তারক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন সম্প্রতি রাজ্যের দায়িত্ব পাওয়া কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল। শুধু নিয়োগ করাই নয়, কাদের বিস্তারক বাছা হবে সেই সংক্রান্ত বিষয়েও স্বয়ং তিনি নজর রাখবেন বলে জানা গিয়েছে।
১৬ অক্টোবর, রবিবার কলকাতায় আসছেন সুনীল। সে দিনই বিস্তারক নিয়োগ নিয়ে তিনি বৈঠক করতে পারেন। ইতিমধ্যে রাজ্যের বাছাই লোকসভা এলাকার জন্য বিস্তারকের তালিকা তৈরি হয়েছে। প্রথম পর্বের ইন্টারভিউ নেওয়াও হয়ে গিয়েছে। সেই বাছাই হওয়াদের থেকে বিস্তারক বেছে চূড়ান্ত তালিকা বানাবেন সুনীল। গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশে যে ভাবে সাফল্য পেয়েছেন সুনীল, সেই পদ্ধতিই বাংলার সংগঠন বিস্তারে কাজে লাগাতে চান তিনি। রবিবার বিস্তারক সংক্রান্ত বৈঠকে রাজ্য বিজেপির জেলা সভাপতি স্তরের উপরে সব পদাধিকারীকেই ডাকা হয়েছে। সেই সঙ্গে সুনীল সোমবার রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। তাঁর দু’দিনের কলকাতা সফরের সময় বৈঠকে যোগ দিতে আসার কথা রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক তথা বিহারের নেতা মঙ্গল পাণ্ডেরও। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও থাকার কথা সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়র।
শুধু বাংলায় নয়, গোটা দেশেই গত জুলাই মাস থেকে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। গোটা দেশের এমন ১৪৪টি আসনে দল শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে, যেখানে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বা শরিক দল জেতেনি। সেই সঙ্গে বাদ দেওয়া হয়েছে ‘অতি কঠিন’ হিসাবে চিহ্নিত কিছু আসন। ২০১৯ সালে দেশে বিজেপি জিতেছিল ৩০৩টি আসনে। পশ্চিমবঙ্গে তারা পেয়েছিল ১৮টি আসন। এর মধ্যে আসানসোল ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ বিজেপি ছেড়ে দিলেও খাতায়কলমে ওই আসনটি এখনও গেরুয়া শিবিরের হাতেই। ফলে এখন রাজ্যে বিজেপির দখলে থাকা লোকসভা আসন ১৭।
জেতা আসন বাদ দিয়ে রাজ্যে নতুন ১৯টি আসনে শক্তিবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি। এ জন্য গত তিন মাসে সেই আসনগুলিতে ১৩ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এসেছেন। তাঁরা রিপোর্টও জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। এ বার সেই রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করেই শুরু হচ্ছে বিস্তারক নিয়োগ। নিজের জেলার বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ সময় দলকে দিয়ে কাজ করতে হবে বিস্তারকদের। তাঁদের কাজ হবে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। তাঁরা জেলায় থাকলেও নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাবেন রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের। সাধারণ ভাবে গোটা বিস্তারক দল পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)। ওই পদে থাকার সুবাদে এই দায়িত্ব পাবেন অমিতাভ চক্রবর্তী।বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্বে বিজেপির জেতা নয় এমন ২১টি লোকসভা আসনে বিস্তারক নিয়োগ হবে। এর পরে প্রতিটি বিধানসভা এলাকা ধরে। ভোট যত এগিয়ে আসবে, তত বিস্তারকের সংখ্যা বাড়বে। একেবারে শেষে মণ্ডল (শহর) স্তরে বিস্তারক নিয়োগ করা হবে। কোথায় দলের কাজ কেমন হচ্ছে, কোথায় উন্নতি, কোথায় খামতি, কী করা দরকার তা নিয়মিত রাজ্য নেতৃত্বকে জানানোই হবে বিস্তারকদের কাজ। এ জন্য আলাদা একটি ‘কল সেন্টার’ খোলারও পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য বিজেপির। আসলে ঠিক এই ভাবেই উত্তরপ্রদেশে কাজ করেছিলেন সুনীল। সেই অভিজ্ঞতাই বাংলায় প্রয়োগ করতে চান তিনি। তবে রাজ্য বিজেপি নেতারা এখনই কেউ এ নিয়ে কথা বলতে রাজি নন। জানা গিয়েছে, গোটা বিষয়টা নিভৃতে করার নির্দেশও এসেছে সুনীলের কাছ থেকেই।