Murshidabad Situation

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের নজরে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরাও

পরিস্থিতি এখন শান্ত হলেও, ভবিষ্যত প্রয়োজনের কথা ভেবে অতিরিক্ত আধা সেনাও পাঠিয়ে রেখেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সূত্রের মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়েছে, তাতে ওই হামলার পিছনে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের দিকেই আঙুল উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:২৫
Share:
সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদের তিনটি এলাকায় অশান্তির ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদের তিনটি এলাকায় অশান্তির ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। —ফাইল চিত্র।

সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদের তিনটি এলাকায় অশান্তির ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গের অন্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে এ ধরনের ঝামেলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্র। ফলে সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রকর্তারা।

Advertisement

পরিস্থিতি এখন শান্ত হলেও, ভবিষ্যত প্রয়োজনের কথা ভেবে অতিরিক্ত আধা সেনাও পাঠিয়ে রেখেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সূত্রের মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়েছে, তাতে ওই হামলার পিছনে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের দিকেই আঙুল উঠেছে। যারা মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় খোলা সীমান্তের সুযোগ নিয়ে এ দেশে এসে আন্দোলনকারীদের ভিড়ে মিশে হামলা চালায়। প্রশ্ন হল, এরা আন্দোলনকারীদের ভিড়ে মিশল কী করে?

গোয়েন্দাদের আঙুল উঠেছে শাসক দলের কিছু নেতার দিকেই। মূলত যাদের নির্দেশে ওই বহিরাগতরা এসেছিল। কিন্তু পরে এক সময়ে ওই বহিরাগতদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি তাঁরা। যার ফলে হামলার শিকার হয়েছে একাধিত তৃণমূল নেতার বাড়ি-গাড়ি। তাঁদের রেওয়াত করেনি উগ্র আন্দোলনকারীরা। কেন রাজ্য প্রশাসন সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের প্রাণ-সম্পত্তি রক্ষা করতে ব্যর্থ হল, কেন রেলের সম্পত্তির উপরে হামলা চালানো হল, হামলার পিছনে কারা রয়েছে, কেন আন্দোলন হিংসাত্মক হওয়া সত্ত্বেও গোড়াতেই পুলিশ তা থামাতে উদ্যোগী হয়নি, সে সব জানিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক চেয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

Advertisement

জঙ্গিপুর, ধুলিয়ান থেকে যে ভাবে কিছু হিন্দু পালিয়ে মালদা গিয়েছেন তাও উদ্বেগে রেখেছে কেন্দ্রকে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও সীমান্ত এলাকায় অশান্তির প্রভাবে নতুন করে অনুপ্রবেশের চেষ্টা শুরু হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাই পরিস্থিতি শান্ত হলেই অবিলম্বে আশ্রয় শিবিরে থেকে ওই হিন্দুদের প্রশাসনের সাহায্যে নিজেদের ভিটেয় ফেরানো হোক,এমনটাই চাইছে নয়াদিল্লি।

আজ বিএসএফ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত নয় কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিএসএফ সূত্রের দাবি, পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক এবং ভয়ার্ত জনগণ বিএসএফকে ‘ফোন করে সাহায্য চাইছেন’। তবে গতকালের চেয়ে আজ পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক।

এ দিকে বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে হিংসাত্মক আন্দোলন করিয়ে এসএসএসি দুর্নীতি থেকে অনেকটাই নজর ঘোরাতে পেরেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার দাবি, ‘‘এসএসএসি দুর্নীতিতে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি যাওয়ার পরেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল নজর ঘোরানোর চেষ্টা হবে। প্রশাসনের মদতে ঠিক তাই হয়েছে। পুরো নজর দুর্নীতি আন্দোলন থেকে সাম্প্রদায়িক হিংসার দিকে ঘুরিয়ে দিতে সফল হয়েছেন মমতা।’’ তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শিক্ষা-দুর্নীতি ও হিন্দুদের উপর অত্যাচার—দু’টি বিষয়কেই এক ছাতার তলায় এনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে এই সব ঘটনায় আগামী বছর ভোটের আগে রাজ্যে হিন্দু ভোটের মেরুকরণে দলের সুবিধা হবে বলে ঘরোয়া ভাবে দাবি করছেন বিজেপি নেতারা। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘বাংলাদেশে ইউনূস সরকার ক্ষমতাদখলের সময়ে এ ভাবেই হিন্দুদের গ্রামে হামলা চালানো হয়েছিল। ঠিক এক কায়দায় এখানেও হামলা চালানো হয়েছে। তৃণমূল শাসনে হিন্দুরা যে সুরক্ষিত নয় তা ফের প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।’’ রাজনীতিকদের মতে, ওয়াকফ আইন এনে ভোটমুখী বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের লক্ষ্য নিয়েছিল দল। বিজেপি নেতৃত্ব জানতেন, তৃণমূল নেতৃত্ব সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের মতোই ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় পথে নামবেন। সেই আন্দোলন হিংসাত্মক চেহারা নেওয়ায় আখেরে দলের ভোটব্যাঙ্ক শক্তিশালী হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা। জঙ্গিপুরের মতো গোটা রাজ্যেই তৃণমূল শাসনে হিন্দুরা নিরাপদ নন, এমন প্রচারে নামার পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement