BJP

BJP: উত্তরই দেবে উত্তর, গেরুয়া শিবিরের নতুন সমীকরণেই কি সভাপতি পদে উত্তরণ সুকান্তর

উত্তরবঙ্গকে বিজেপি আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে। গেরুয়া শিবিরের একের পর এক পদক্ষেপে উত্তরবঙ্গ নিয়ে বিজেপি-র আগামী পরিকল্পনা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:০২
Share:

বাঁদিক থেকে, জন বার্লা, সুকান্ত মজুমদার, নিশীথ প্রামাণিক ও রাজু বিস্তা গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্য সভাপতি করে বিজেপি বুঝিয়ে দিল ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরে বাড়তি নজর থাকবে গেরুয়া শিবিরের। এক অর্থে সুকান্তই প্রথম উত্তরবঙ্গ থেকে রাজ্য সভাপতি। তপন শিকদার আদতে মালদহের হলেও তাঁর রাজনীতি ছিল কলকাতা-নির্ভর। ঘটনাচক্রে, মালদহের বুলবুলচণ্ডীর তপনের জন্মদিনেই ঘোষিত হল বালুরঘাটের সুকান্তর নাম।
বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের প্রতিশ্রুতি ছিল না বিজেপি-র। কিন্তু ভোটের পরে পরেই সেই দাবি তুলে দেন দলের সাংসদ জন বার্লা। পরে তিনি অবশ্য নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্য হয়ে গিয়েছেন। উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্যের দাবিতে বার্লাকে দল সমর্থন না করলেও রাজ্য স্তর থেকে কেন্দ্রীয় স্তরের বিজেপি নেতারা এটা বলেছেন যে, ‘উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত’ উত্তরবঙ্গের পৃথক হওয়ার দাবি অমূলক নয়। তার পরেই দলবিরোধী কথা বলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে মন্ত্রিত্বের ‘পুরস্কার’ পেয়েছেন বার্লা। এর পরেও গেরুয়া শিবিরের একের পর এক পদক্ষেপে উত্তরবঙ্গ নিয়ে বিজেপি-র আগামী পরিকল্পনা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

Advertisement

সাম্প্রতিক কালে উত্তরবঙ্গকে বিজেপি যে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে, তার আরও কয়েকটি নজির দেখা গিয়েছে। একা বার্লা নন, মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকও। দিনহাটায় মাত্র ৫৭ ভোটে জয় পেলেও কোচবিহার লোকসভা আসনের অন্তর্গত বিধানসভা আসনগুলির কারণে নিশীথের রিপোর্টকার্ড ভাল। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে কোচবিহারে পাঁচটি বিধানসভায় এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেখানে এ বার বিধানসভায় তারা জিতেছে ছ’টিতে। অতিরিক্ত জয়টি এসেছে সিআরপিএফের বুলেট-দীর্ণ শীতলখুচি আসনে।

আলাদা রাজ্যের দাবি করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেও পুরস্কৃত বার্লা বিজেপি-র সফলতম সাংসদ। আলিপুরদুয়ারের সাংসদ বার্লা একটা সময়ে ছিলেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা। বিজেপি-তে যোগ দিয়ে ২০১৯ সালে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে জিতেছিলেন। তাঁর আলিপুরদুয়ার লোকসভা এলাকার সাতটি বিধানসভাতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। ২০২১-এর ভোটেও সাতটি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। রাজ্যে বার্লাই একমাত্র বিজেপি সাংসদ, যিনি সাতে সাত পেয়েছেন। তিনি এখন সংখ্যালঘু দফতরের প্রতিমন্ত্রী। বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট সে ভাবে পায়নি বিজেপি। কিন্তু উত্তরবঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশই অমুসলিম। কয়েকটি জেলায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বসতি যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। বার্লা নিজেও খ্রিস্টান। দার্জিলিং জেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যাও ভালরকম। ফলে বার্লাকে সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী করার পিছনে উত্তরবঙ্গকে গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিতই দেখতে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল।

Advertisement

উত্তরবঙ্গকে বেশি করে সর্বভারতীয় স্তরে আলোচ্য করে তোলার লক্ষ্যে আরও দু’জনকে সম্প্রতি পুরস্কৃত করেছে বিজেপি। প্রথম জন দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা। লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই লোকসভা আসনে সাতের মধ্যে ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে একটি আসন— কালিম্পং— কমেছে। তবুও একে সাফল্য হিসাবে দেখছে বিজেপি। রাজুকে সম্প্রতি বিজেপি যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মন্ত্রিত্ব না পেলেও বিজেপি-র পরম্পরা বলছে, যুব মোর্চার সর্বভারতীয় দায়িত্ব মানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বের কাছাকাছি থাকা। মোদীর মন্ত্রিসভায় থাকা রাজনাথ সিংহ, ধর্মেন্দ্র প্রধান, অনুরাগ ঠাকুর, জি কৃষ্ণ রেড্ডিরা আগে যুব মোর্চার সর্বভারতীয় দায়িত্বে ছিলেন। আরও বড় কথা, বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও তা-ই ছিলেন।

কোচবিহার থেকে নিশীথ একা নন, গুরুত্ব বেড়েছে তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতি রাভা রায়েরও। সর্বভারতীয় দায়িত্ব পেয়ে তিনি হয়েছেন মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। মালতির রিপোর্টকার্ডও ভাল। নিজে জেতার পাশাপাশি তাঁর জেলা কোচবিহারের ন’টি আসনের মধ্যে সাতটিতেই জিতেছে বিজেপি। ভোট শতাংশের হারেও তৃণমূলের থেকে অনেকটা এগিয়ে ওই জেলায় বিজেপি-র ঝুলিতে ৪৯.০৭ শতাংশ ভোট রয়েছে।

উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রীয় বিজেপি-র অধিক গুরুত্ব দেওয়ার শেষ এখানেই নয়। সম্প্রতি মালদহে ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বার রাজ্য সভাপতিও করা হল উত্তরবঙ্গ থেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement