বিজেপি-র বিড়ম্বনা বাড়ালেন সৌমিত্র খাঁ? —ফাইল চিত্র
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বৈঠকে থাকছেন না দলের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। শনিবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা দিলীপের। সেই বৈঠকে তিনি যোগ দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন বিজেপি-র সাংসদ সৌমিত্র। সৌমিত্রর বক্তব্য, ‘‘লকডাউন চলছে। মিটিং-মিছিল বন্ধ আছে। রাজ্য সরকারের সেই লকডাউনের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়েই আমি বৈঠকে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ সৌমিত্রের এই বক্তব্য বিজেপি-র অন্দরের রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছে। ঘটনাচক্রে, সৌমিত্র বিজেপি-র একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপও ত্যাগ করেছেন। তা নিয়ে জল্পনা কম নয়। তবে সৌমিত্র গ্রুপ ছাড়ার বিষয়টিকে খুব একটা আমল দিতে চাননি।
শনিবার একটি বাঁকুড়া জেলার বিজেপি-র মিডিয়া সেলের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে একটি মেসেজ আসে। সেখানে জানানো হয়, ৫ জুন বিকালে বিষ্ণুপুর লাক্সারি লজে সাংগঠনিক বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ। সেই বার্তাটি আসার পরেই মিডিয়া সেলের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করেন সৌমিত্র। সেই সঙ্গে ছেড়ে দেন দলীয় হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপও। তখনই সৌমিত্রকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। তাহলে কি দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে চাইছেন সৌমিত্র? যিনি আগে তৃণমূলে ছিলেন? এবং যাঁর ‘বিচ্ছিন্না’ স্ত্রী সুজাতা মন্ডল এখন তৃণমূলে?
আড়াই বছর আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়ে সাংসদ হন সৌমিত্র। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তাঁর হয়ে ভোটের ময়দানে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন স্ত্রী সুজাতা। কিন্তু এ বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সৌমিত্র-সুজাতা পর্বে হঠাৎ পটপরিবর্তন ঘটে। সুজাতা যোগ দেন তৃণমূলে। স্ত্রী-র জন্য সাংবাদিক বৈঠকে চোখের জলও ফেলেন বিজেপি সাংসদ। আবেগতাড়িত হলেও সৌমিত্র তখনও স্ত্রী-র তৃণমূল যোগের সিদ্ধান্তকে পিছনে ফেলে বিজেপি-র হয়ে আরও একনিষ্ঠ লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছিলেন। তাহলে এখন কী হল? বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবিরই কি গেরুয়া শিবির থেকে সৌমিত্রর দূরত্ব তৈরির কারণ? পুরো ঘটনা সম্পর্কে সৌমিত্র বলেছেন, ‘‘এমন অনেক হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ থাকে। ১৫০-২০০ গ্রুপের মধ্যে কখনও কখনও একটা-দুটো থেকে আমাদের বেরিয়ে যেতে হয়। আমি দেখতে পাইনি, আমাদের যে আইটি সেল রয়েছে, এটি তাদের তালিকাভুক্ত গ্রুপ কি না।’’
দিলীপের বৈঠরকে অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে সৌমিত্র বলেন, ‘‘দিলীপদা আসছেন আমি জানি। কিন্তু রাজ্য সরকারের লকডাউনের নিয়ম মেনেই আমি বৈঠকে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিজের এলাকাতেও এই সময়ের মধ্যে কোনও মিটিং-মিছিল আমি করিনি। বাড়িতেই থেকেছি। ১৫ তারিখ পর্যন্ত এটিকে মান্যতা দিয়েছি।’’ তাঁর দলবদলের যে জল্পনা তৈরি হয়েছে, সৌমিত্র তা নিয়ে বলেছেন, ‘‘আড়াই বছর আগে আমি বিজেপি-তে যোগদান করেছি। যখন তৃণমূল থেকে এতজন দল বদলে বিজেপি-তে আসেননি, তখন থেকেই আমি বিজেপি-র সদস্য। তখন ৩ জন বিধায়ক ছিলেন, এখন ৭৭ জন বিধায়ক রয়েছেন। তাই দলবদলের প্রশ্ন ওঠে না। যাঁরা ভাবছেন, ভুল ভাবছেন।’’
কিন্তু জল্পনা উস্কে সৌমিত্রর স্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী সুজাতা ঘাসফুল শিবিরে ফেরার বিষয়ে বার্তা দিয়েছেন সৌমিত্রকে। তিনি বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা বিজেপি-র ভিতরের কোন্দলকে প্রকাশ্যে আনছে আরও। বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্গত যে পাঁচটি আসন বিজেপি পেয়েছে, তাতে দিলীপ ঘোষের কোনও ভূমিকা নেই। কর্মীরা নিশ্চয়ই তাঁকে চাইছেন না। হতে পারে সৌমিত্র সেই কারণেই কর্মীদের ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়ে গ্রুপ ছেড়েছেন। তবে কেন গ্রুপ ছেড়েছেন, সৌমিত্রই তাস্পষ্ট বলতে পারবেন। আমি প্রথম থেকেই বলেছিলাম, সৌমিত্রর বিজেপি ছেড়ে দেওয়া উচিত। যে বিজেপি ঘর ভাঙায়, যে বিজেপি মহিলাবিদ্বেষী, সেই বিজেপি-তে থাকার কোনও মানে হয় না। সৌমিত্রর বুদ্ধি ফিরুক। তৃণমূলে আসুক। এটা আমি সর্বতভাবে চাই। আমি ওঁকে আহ্ববান জানাব। আবর্জনার সঙ্গে থাকবেন কেন?’’