ঠাকূরনগরে অমিত শাহ আসবেন এমন আশ্বাসে খুশি শান্তনু ঠাকুর।
মতুয়া ভোটের চিন্তায় জেরবার বিজেপি কিছুটা স্বস্তি পেল। এখনও পর্যন্ত যা ছবি, তাতে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে নিয়ে ‘অস্বস্তি’ কেটেছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করা নিয়ে ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছিলেন শান্তনু। অবশেষে তাঁর দাবি মেনে মতুয়া সমাজের সামনে সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করা হবে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আশ্বাস পেয়েই শান্তনু শান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বুধবার শান্তনু জানিয়েছেন, তাঁর তৃণমূলে যাওয়া নিয়ে যাবতীয় জল্পনা না কি ছিল কল্পকাহিনি। তিনি বিজেপি-তে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।
তবে শান্তনুর মান ভাঙাতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি বিজেপি-কে। সম্প্রতি অমিতের সফরের আগে গত ১৯ ডিসেম্বর ঠাকুরনগরে গিয়ে শান্তনুর সঙ্গে মতুয়া-সমস্যা নিয়ে কথা বলেছিলেন রাজ্য বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তার পরেও শান্তনুর মুখে সিএএ ইস্যুতে বিরূপ মন্তব্য শোনা যেতে থাকে। বনগাঁর সাংসদ এমনটাও বলেন যে, তাঁর কাছে আগে মতুয়া স্বার্থ। পরে বিজেপি। কৈলাসের পরে শান্তনুকে বোঝাতে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ অন্যরাও সক্রিয় হন। সে সব আলোচনায় শান্তনু যে সমস্ত দাবি করেছিলেন, তার প্রায় সবই বিজেপি-র রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বুধবারই শান্তনুর দাবি মতো বনগাঁ লোকসভা এলাকাকে আলাদা ‘সাংগঠনিক জেলা’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপি প্রতিটি লোকসভা আসনকে একটি করে সাংগঠনিক জেলা হিসেবে দেখলেও এতদিন বনগাঁ বারাসত জেলার মধ্যেই ছিল। বুধবারই নতুন বনগাঁ জেলা গঠন করে তার সভাপতি হিসেবে শান্তনুর ‘ঘনিষ্ঠ’ মানসপতি দেবের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পরেই বুধবার বিকেলে হেস্টিংসে রাজ্য বিজেপি-র নির্বাচনী দফতরে মুকুলের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে বসেন শান্তনু। রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৯ বা ২০ জানুয়ারি ঠাকুরনগরে যেতে পারেন অমিত। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সামনে তিনি নিজেই সিএএ নিয়ে কেন্দ্রের পরিকল্পনার কথা জানাবেন।
ঘটনাচক্রে, শান্তনু দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রীয় অমিত নিজে মতুয়া সমাজের কাছে গিয়ে সিএএ-র বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন। গত ২০ ডিসেম্বর বোলপুরে সাংবাদিক বৈঠকে সিএএ কার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অমিত বলেছিলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এত বড় অভিযান করা সম্ভব নয়। কেবল বিধি প্রণয়নই বাকি আছে। করোনাভাইরাসের টিকা এসে গেলে এবং করোনার শৃঙ্খল (সাইক্ল) ভেঙে গেলে আমরা এই বিষয়ে ভাবব। যখন কাজ শুরু করব, তখন আপনাদের জানিয়ে দেব।’’ এর পরেই শান্তনু রায়গঞ্জের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে দাবি করেছিলেন, অমিতকে স্বয়ং ওই ব্যাখ্যা দিতে হবে মতুয়াদের সামনে। তাঁর সব কথা মেনে নেওয়ায় কি নিজের ‘জয়’ দেখছেন শান্তনু? বুধবার এই প্রশ্নের জবাবে শান্তনু আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘আমার জয় নয়। এটা মতুয়া সমাজের জয়।’’
আরও পড়ুন: ‘দানবের সঙ্গে হবে লড়াই মহামানবের’
প্রসঙ্গত, বিজেপি-র উপর শান্তনু যে ভাবে নিয়মিত ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন, তাতে ময়দানে নেমেছিল তৃণমূল। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শান্তনুকে তৃণমূলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ঠাকুরবাড়ির অন্দরের সমীকরণে শান্তনুর বিরোধী মমতাবালা ঠাকুরও প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, শান্তনু তৃণমূলে এলে তাঁর শান্তনুর সঙ্গে কাজ করতে কোনও আপত্তি নেই। বস্তুত, তৃণমূল একটা সময়ে ভেবেছিল, সাংসদ সুনীল মণ্ডলের দলত্যাগের পাল্টা দেওয়া যাবে শান্তনু বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এলে। তবে বুধবারের ঘটনাপ্রবাহ বলছে, আপাতত শান্তি-স্বস্ত্যয়ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: এবার বিজেপি-তে যাচ্ছেন তৃণমূলের ছাত্রনেতা সুজিত
শান্তনুর ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল মূলত রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের একটি মন্তব্য ঘিরে। গোপালনগরে বিজেপির এক সভায় দিলীপ জানিয়েছিলেন, এক বছরের মধ্যে হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তারই প্রেক্ষিতে শান্তুনু পরে বলেন, ‘‘কোনও এক নেতার কাছে শুনলাম, এক বছর পরে নাকি সোসাইটিতে নাগরিক আইন চালু হবে। এত দেরি হলে আমাদের আর তার দরকার নেই। পরবর্তীকালে এমনিই আমরা নাগরিকত্ব পাব।’’ একই সঙ্গে শান্তনু জানান, আগামিদিনে মতুয়া সমাজ কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তিনি তার সঙ্গেই থাকবেন। মতুয়াদের সিদ্ধান্ত ছেড়ে রাজনীতির কথা ভাববেন না। এখন অবশ্য শান্তনু বলছেন, দল নিয়ে তাঁর কোনও ক্ষোভই নেই। তিনি বলেন, "আমি শুধু চেয়েছিলাম, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসে ঘোষণা করুন। সেটা হচ্ছে জানার পরে আমি খুশি।"