সিঙ্গুরে ধর্নার সময় নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন লকেটের।
এলাকার সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে সিঙ্গুরে কেন ধর্না কর্মসূচি? এমন প্রশ্ন ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই অস্বস্তি ছিল বিজেপি শিবিরে। বুধবার সেই অস্বস্তি বেড়ে গেল লকেটের তোলা প্রশ্নে? উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত লকেটের প্রশ্ন, ‘‘এখন কলকাতা পুরভোটের প্রচার চলছে। সংসদে অধিবেশনও চলছে। এই সময়ে সিঙ্গুরে কেন ধর্না কর্মসূচি নেওয়া হল আমি জানি না। আমার মনে হয় আর ক’টা দিন অপেক্ষা করে শীতকালীন অধিবেশন শেষে আমি রাজ্যে ফিরলে এই কর্মসূচি নেওয়া যেত।’’
বিজেপি-র তিন দিনের ধর্না কর্মসূচির প্রথম দু’দিন তেমন সমাগমও হয়নি সিঙ্গুরে। ‘কৃষক বিক্ষোভ’ নাম দেওয়া হলেও কৃষকদের উপস্থিতি ছিল না। ধর্নার প্রথমদিন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, তাঁর দুই পূর্বসূরি দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহেরা ছিলেন সিঙ্গুরে। ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তবে দ্বিতীয় দিনে একাই ছিলেন সুকান্ত। মঙ্গলবারের থেকেও কম ছিল বুধবারের সমাগম। যদিও এই ধর্না কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি মেনে কর্মসূচি হচ্ছে। শ’পাঁচেক মানুষের উপস্থিতি রয়েছে। এটাকে কোনও ভাবেই ফ্লপ বলা যাবে না। যাঁরা বলছেন তাঁরা সমালোচনা করার জন্যই বলছেন।’’ তবে লকেটের তোলা প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি সায়ন্তন। তিনি বলেন, ‘‘এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই কলকাতা পুরভোট বা শীতকালীন অধিবেশনের সময় এই ধর্না কেন তা নিয়ে আমি জবাব দিতে পারব না।’’
লকেট অনুগামীদের দাবি, এলাকার সাংসদকে এড়িয়ে কর্মসূচি নেওয়াতেই সাফল্য এল না। আগে থেকে পরিকল্পনা করলে এমন ভাবে দলের মুখ পুড়ত না। তাঁদের আরও দাবি, এই কর্মসূচির কথা আগে থেকে জানানোই হয়নি হুগলির সাংসদকে। একেবারে আগের দিনে ফোনে বলা হয় সব কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে। এই প্রসঙ্গে লকেট বলেন, ‘‘সংসদে আমি হুইপ রয়েছি। সেই কারণে আমার পক্ষে এখন দিল্লি ছাড়া সম্ভব ছিল না। আমি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়ে চারদিনের জন্য উত্তরাখণ্ডে এসেছি। সেটাও দলের নির্দেশে। আগে থাকতে কথা হলে একদিনের জন্যও সিঙ্গুরে যেতেই পারতাম। তবে আমার মনে হয়, আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করে সিঙ্গুরের কর্মসূচি নেওয়া যেত। এখন কলকাতা পুরভোটকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল দলের।’’
বুধবারের সিঙ্গুরের ধর্না মঞ্চ। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা পুরভোটেও বিজেপি-র তারকা প্রচারকদের তালিকায় লকেটের নাম রয়েছে। কিন্তু দল পুরভোটকে গুরুত্ব দিচ্ছে না প্রশ্ন তোলা লকেট নিজেও কলকাতার কোনও ওয়ার্ডে প্রচারে যাননি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে আলাচোনা করে নাম তালিকায় রাখা হয়নি। কিন্তু দলের অজানা নয় যে, আমি এখন উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই আমায় এই রাজ্যের সহকারী পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছেন। আমি মনে করি, দল যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে পালন করা উচিত। সেই কাজটাই আমি করছি।’’
রাজ্য বিজেপি-র নেতারা অবশ্য বলছেন, লকেট ইদানীং রাজ্য রাজনীতি নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নন। এক শীর্ষ নেতা লকেট প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘লকেট এই রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদকও। সেটাও দলেরই দেওয়া দায়িত্ব। কিন্তু তিনি সেটা ছেড়ে জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা চাইছেন। সেই কারণেই রাজ্যের কোনও কর্মসূচিতে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না।’’ এই প্রসঙ্গে দিলীপের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘‘দল একটা দায়িত্ব দিলে আর একটা বাদ দিতে বলে না। দিলীপদা তো সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। কিন্তু বাংলায় তাঁর যে দায়িত্ব রয়েছে সেটা কি তিনি অস্বীকার করছেন!’’
হুগলির সাংসদ লকেট বিধানসভা নির্বাচনে চুঁচুড়া আসনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই রাজ্যে সময় দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ ওঠে। ভবানীপুর উপনির্বাচন থেকে কলকাতা পুরভোট কোনও দায়িত্বই তিনি পালন করেননি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি কৃষক ভোট টানতে মুখ করেছিল লকেটকেই। তাঁর নেতৃত্বেই ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’ হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি অকাল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনে লকেটকে না রেখেই পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। এই আন্দোলনের ডাক শুভেন্দু দিলেও তাতে যোগ দিয়েছেন সুকান্ত, দিলীপরা। মঞ্চে তাঁদের ছবিও রয়েছে। কিন্তু সেখানেও অনুপস্থিত লকেট। এই প্রসঙ্গে হুগলির সাংসদ বলেন, ‘‘আমার ছবি কেন নেই আমি বলতে পারব না। ওটা রাজ্যের নেতারাই জানেন।’’ আর রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, ‘‘উনি এখন আর বাংলার নন, উত্তরাখণ্ডের।’’