গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
দত্তপুকুরে বিস্ফোরণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নীরব’ কেন, প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রবিবারের বিস্ফোরণের ঘটনার পর সোমবার বসেছিল বিধানসভার অধিবেশেন, সেখানেই ওঠে দত্তপুকুর বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ। কলকাতা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে এই বিস্ফোরণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী কেন এখনও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি, সেই প্রশ্ন তুলে শুভেন্দু বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ থেকে এসে রাজ্যপাল দত্তপুকুরে যেতে পারেন আর মুখ্যমন্ত্রী পারেন না?’’ সোমবার এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব চেয়ে শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিধানসভার কক্ষত্যাগও করেন বিরোধীরা।
রবিবার সকালে দত্তপুকুরে বাজি কারখানা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তাতে সোমবার পর্যন্ত ন’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। রবিবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বিস্ফোরণের ঘটনাটিকে ‘ভয়াবহ’ এবং ‘নিছক দুর্ঘটনা নয়’ বলে মন্তব্য করেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। অন্য দিকে, রবিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে ডেকে পাঠান রাজ্য পুলিশের ডিজিকে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাজ্যপুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয়ের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন তিনি। পুলিশসূত্রে খবর ছিল, মমতা ওই বৈঠকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ প্রধানকে। এমনকি, আবার রাজ্যে বাজি বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনি যে ক্ষুব্ধ, তা-ও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে নিজের বাড়িতে বৈঠক করলেও মমতা রবিবার দত্তপুকুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি। প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও মন্তব্যও করেননি। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর এই নীরবতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তাঁর প্রশ্ন, রাজ্যপাল যদি উত্তরবঙ্গ সফর থেকে ফিরে আবার রাতেই দত্তপুকুরে পৌঁছতে পারেন, তবে মুখ্যমন্ত্রী যেতে পারেন না?
সোমবার বিধানসভায় বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন দত্তপুকুরের ঘটনায় রাজ্য সরকারের তরফে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, এ বিষয়ে জবাব না পেয়ে বিধানসভা মূলতবি প্রস্তাব এনেছিলেন বিরোধীরা। সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরে বিধানসভা মূলতবি হলেও বাইরে এসে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী এসে এই ঘটনার অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট জানাবেন বিধানসভায়। উনি প্রথমার্ধে আসেননি। হয়তো দ্বিতীয়ার্ধে আসবেন উৎসবে যোগ দিতে। আমরা এই নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
সোমবার এ প্রসঙ্গে বলতে এগরা বিস্ফোরণের পর মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যও টেনে এনেছেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা বলেছিলেন, ‘‘এগরার পর হেলিকপ্টারে পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কথা দিয়েছিলেন, আর এমন ঘটনা বাংলায় ঘটবে না। আরও অনেক পদক্ষেপের ঘোষণাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু এগরার পর তিন মাসের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এর পরও একে একে বজবজ, মালদহের ঘটনা ঘটেছে। আর এ বার কলকাতা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে দত্তপুকুরে হয়েছে বাজি কারখানা বিস্ফোরণ। শুভেন্দুর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এর দায় এড়াতে পারেন না। তাঁর উচিত এই ঘটনার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা।’’
(এই প্রতিবেদনে আগে লেখা হয়েছিল, রবিবার সন্ধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয় এবং পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। কিন্তু রবিবারের ওই বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিজি উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে কমিশনার আসতে পারেননি। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। )