রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। ফাইল চিত্র।
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জেতার কয়েক মাসের মধ্যেই যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তবে বিধায়ক পদে ইস্তফা না দেওয়ায় বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়কদের পাশে বসার অনুমতি নেই। রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী এই মুহূর্তে তৃণমূলে না বিজেপিতে রয়েছেন? কৃষ্ণকে বয়কটের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এমন প্রশ্ন তুললেন উত্তর দিনাজপুর তৃণমূলের রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মানস ঘোষ। যদিও মানসের এই মন্তব্যের পর তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করে ‘ভোট লুঠকারী’ বলেছেন কৃষ্ণ। ফলে কৃষ্ণ-তরজায় অস্বস্তি বেড়েছে উত্তরের জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে।
গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল বদলে পদ্মশিবিরে যোগদান করেন কৃষ্ণ। তবে বিধায়ক হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অক্টোবরে পুরনো দলে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু, বছর ঘোরার আগেই তাঁকে নিয়ে জেলা তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।
পঞ্চায়েত সমিতির টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে বিধায়কের হুইপ জারি করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২৭ মে থেকে রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতিতে তালা ঝুলিয়ে দেন সদস্যেরা। এর জেরে পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রয়োজনীয় কাজে আসা সাধারণ মানুষ হয়রানির মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, শাসকদলেরও ক্ষেত্রে এই ঘটনা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই ‘অচলাবস্থা’ কাটাতে মঙ্গলবার রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাতে উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি কানাইয়ালাল অগ্রবাল। ওই বৈঠকের পরেই পঞ্চায়েত সমিতির তালা খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু, এর পরেই কৃষ্ণের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন মানস। তিনি বলেন, ‘‘যে বিধায়ক (কৃষ্ণ) এখনও বিধানসভায় তৃণমূল সদস্যদের আসনে বসতে পারেন না, তাঁকে এখনও বিজেপি বিধায়কদের জন্য নির্দিষ্ট আসনে বসতে হয়, তাঁর পরামর্শে পঞ্চায়েত সমিতি চলবে, এমন হতে পারে না। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক হিসাবে গত চার বছর ধরে সুষ্ঠু ভাবে রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনা করছি। তিনি নিজে কোথায় (তৃণমূলে না বিজেপিতে) থাকবেন, আগে তা স্থির করুন।’’ কৃষ্ণের হুইপ জারি করার বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন মানস। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি স্বায়ত্তশাসিত। এখানে বিধায়কের হুইপ জারির করার ক্ষমতা নেই। রায়গঞ্জের কোনও কর্মসূচিতে এই বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। রায়গঞ্জের বিধায়ককে আমরা বয়কট করছি।’’
মানসের কটাক্ষের পরেই তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন কৃষ্ণ। তাঁর দাবি, ‘‘যিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে ভোটে লড়েছিলেন। এমনকি, সকলেই জানেন যে তিনি ভোট লুঠ করে জিতেছেন। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় নিজের গ্রামেই ঢুকতে পারেন না, তাঁর বিষয়ে আমি কোনও টিপ্পনি করব না। দল এ বিষয়টি দেখছে। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’’
রায়গঞ্জের বিধায়কের সঙ্গে যে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের ‘মতান্তর’ রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল। মঙ্গলবার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভা অধিবেশন নিয়ে বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ব্যস্ত রয়েছেন। সে জন্য তাঁকে ছাড়াই আমরা দলগত ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম। আপাতত জনগণের সুবিধার জন্য পঞ্চায়েত সমিতি খুলে দেওয়া হল। বিধায়ক ফিরলে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে আলোচনা করে সকলের মতান্তর কাটিয়ে তোলা হবে।’’
এই তরজায় মন্তব্য করতে রাজি হননি বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার। যদিও তাঁর দাবি, ‘‘সরকারি ঠিকাদারি কোন গোষ্ঠী পাবে, তা নিয়েই তৃণমূলের কাজিয়া। ওদের দলীয় কাজিয়া নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু এই কাজিয়ার জন্য পঞ্চায়েত সমিতি বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হলে তা দুশ্চিন্তার বিষয়।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘তৃণমূলে হিংসা, ভাগাভাগি নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি বন্ধ ছিল। এত দিন ধরে সাধারণ মানুষের যে অসুবিধে হয়েছিল, পঞ্চায়েত সমিতি খোলায় তা কিছুটা লাঘব হবে।’’