ফাইল চিত্র।
বিধানসভার পাবলিক অ্যাকউন্টস কমিটির (পিএসি) বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল বিজেপি। এ বার পিএসি চেয়ারম্যান পদে দলত্যাগী বিধায়ক মুকুল রায়ের মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হল প্রধান বিরোধী দল। কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক তথা আইনজীবী অম্বিকা রায় মঙ্গলবার এই মর্মে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে ওই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা। শাসক দল তৃণমূলের অবশ্য দাবি, পিএসি বা বিধানসভার কোনও কমিটির চেয়ারম্যান পদে কাকে নিয়োগ করা হবে, তা একান্ত ভাবেই স্পিকারের এক্তিয়ারভুক্ত। বিধানসভার অভ্যন্তরীণ এই বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
বিজেপির অভিযোগ, পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে মুকুলবাবুকে নিয়োগ করতে গিয়ে বিধানসভার কার্যবিধির ৩০২ ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ রাজ্যে আগে এমন নজির নেই। বিরোধী দলের বিধায়ক অম্বিকাবাবুর দাবি, পিএসি-র শীর্ষ পদে দলত্যাগী মুকুলবাবুর নিয়োগ ‘অবৈধ’। প্রথা অনুযায়ী, ওই পদ বিরোধী দলের প্রাপ্য। পিএসি-র সদস্য হিসেবে মুকুলবাবুর মনোনয়নে প্রস্তাবক ও সমর্থক ছিলেন তৃণমূল সমর্থিত জনমুক্তি মোর্চা এবং তৃণমূলের দুই বিধায়ক। বিজেপি কোনও ভাবেই তাঁর নাম পিএসি সদস্যদের তালিকায় রাখেনি, এই তথ্যই আদালতের আবেদনে তুলে ধরেছেন বিজেপি বিধায়ক। বস্তুত, পিএসি চেয়ারম্যান নিয়োগ ঘিরে এই বিতর্ক এখন মুকুলবাবুর বিধায়ক-পদ খারিজের আবেদনের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে। তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় মুকুলবাবুর বিধায়ক-পদ খারিজের জন্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবেদন করেছেন, স্পিকারের কাছে তার শুনানি চলছে। সেই মুকুলবাবুকে পিএসি-র শীর্ষে বসানো নিয়েই আদালতে আবেদন দায়ের হল।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, মামলা হওয়ার বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিধানসভায় যা করা হয়েছে, আইন মেনেই করা হয়েছে।’’ পিএসি-র বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামী ৩০ জুলাই, শুক্রবার। সে দিনই স্পিকারের ঘরে মুকুলবাবুর দলত্যাগ সংক্রান্ত আবেদনেরও পরবর্তী শুনানি। শুভেন্দু জানিয়ে রেখেছেন, দলত্যাগের আবেদনের ফয়সালা দ্রুত না হলে তাঁরা আদালতে যাবেন। এখন পিএসি-র চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়েও মামলা হওয়ায় ওই কমিটির বৈঠক অনিশ্চিত বলে পরিষদীয় সূত্রের একাংশের দাবি।
বিরোধীদের পদক্ষেপের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকার পক্ষের উপ-মুখ্য সচেতক এবং তৃণমূল নেতা তাপস রায় বলছেন, ‘‘হাউস এবং স্ট্যান্ডিং মিলিয়ে বিধানসভার মোট ৪১টি কমিটিই স্পিকারের এক্তিয়ারভুক্ত। বিধানসভার নিয়ম অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। পিএসি বা কোনও কমিটির বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আশা করব, আদালতে গিয়ে বিজেপি বিষয়টা স্পষ্ট করে বুঝে যাবে!’’ বিজেপির আইনি পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।