Hiran Chatterjee

কেশপুর কি পদ্মের শেষপুর হিরণের? দেখা করেছেন অভিষেকের সঙ্গে, জোর দিয়ে ফের জানাল তৃণমূল

আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি কেশপুরে অভিষেকের জনসভায় হিরণ ফের তৃণমূলে যোগদান করতে পারেন, এমন জল্পনা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। যদিও কোনও তরফেই এর আনুষ্ঠানিক সত্যতা মেলেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:২৮
Share:

বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে জোর জল্পনা বাংলার রাজনীতিতে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শেষ পর্যন্ত কি কেশপুরেই বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তৃণমূলে ফিরে আসবেন বিজেপি বিধায়ক তথা অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়? আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা রয়েছে। সেখানেই হিরণ বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে তৃণমূলে ফিরতে পারেন বলে জোরালো জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনও তরফেই কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি। তৃণমূলের একাংশের দাবি, হিরণ প্রত্যাবর্তনে ‘আগ্রহী’। বল এখন তৃণমূলের কোর্টে। কেশপুরের সভায় হিরণ যদি তৃণমূলে ফেরেন, তা হলে বলতে হবে, শাসকদলের শীর্ষনেতৃত্ব হিরণ সম্পর্কে ‘অনুকূল’ মনোভাব পোষণ করছেন।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, হিরণ তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ‘বিজেপি’ শব্দটি মুছে ফেলেছেন। সেখানে খড়্গপুর সদরের বিধায়ক ও কাউন্সিলর কথাটি লেখা থাকলেও কোন দলের সঙ্গে তিনি যুক্ত, তার কোনও উল্লেখ নেই। বিষয়টি যথেষ্ট ‘ইঙ্গিতবহ’। যদিও হিরণ-হিতৈষীদের যুক্তি, সমস্ত জনপ্রতিনিধিই সকলের প্রতিনিধি। তিনি যে দলের হয়েই ভোটে জিতুন না কেন, জয়ের পর তিনি সকলেরই বিধায়ক বা কাউন্সিলর। যেমন মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী সকলেরই মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী।

হিরণ একদা তৃণমূলেই ছিলেন। বস্তুত, তিনি ছিলেন যুব তৃণমূলে। তখন অভিষেকের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল। পরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২১ সালের ভোটে জিতে খড়গপুর সদরের বিজেপি বিধায়কও হন। ঘটনাচক্রে, হিরণের বিধানসভা কেন্দ্রটি বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের লোকসভা কেন্দ্র মেদিনীপুরের অন্তর্গত। কিন্তু দিলীপের সঙ্গে হিরণের সম্পর্ক কখনওই ‘মসৃণ’ থাকেনি। বস্তুত, শনিবার সকালেও দিলীপ হিরণকে ‘খোঁচা’ দিয়েছেন। অভিষেকের দফতরে হিরণের অপেক্ষারত থাকার ছবি প্রকাশ হওয়া সম্পর্কে দিলীপ সটান বলেছেন, ‘‘যাঁর ছবি ভাইরাল হয়েছে, তাঁকেই এর কৈফিয়ত দিতে হবে।’’ এই বক্তব্য হিরণের পছন্দ হওয়ার কথা নয়। যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে হিরণের সম্পর্ক ভাল। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, শুভেন্দুই তাঁকে বুঝিয়েসুজিয়ে এখনও দলত্যাগ থেকে বিরত রেখেছেন।

Advertisement

দলত্যাগের জল্পনার সত্যতা জানতে হিরণের সঙ্গে শনিবার দিনভর ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি ফোন ধরেননি। হিরণের মোবাইলে পাঠানো বার্তার জবাবে তিনি শুক্রবার রাতে যে টুইটটি করেছিলেন, সেটিই আবার পাঠিয়ে দেন। অর্থাৎ, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করছেন।

সম্প্রতি হিরণ অভিষেকের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছেন বলে খবর ছড়ায়। সেই মর্মে শুক্রবার একটি ছবিও সমাজমাধ্যমে ঘুরতে শুরু করে। হিরণ অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করেন। কিন্তু শনিবার তৃণমূলের তরফে আবার জোর দিয়ে জানানো হয়, অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন হিরণ। সেখান থেকেই তিনি মধ্যপ্রদেশে গিয়েছেন। দলের একটি শিবিরের বক্তব্য, হিরণ সে দিনই তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে কিছু দিন অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। হিরণ যে ভাবে বিষয়টি অস্বীকার করছেন, তাতে তৃণমূলের একাংশ ক্ষুণ্ণ। ওই অংশের এক নেতার কথায়, ‘‘এখন তো স্টিল ফোটো (স্থিরচিত্র) দেখা যাচ্ছে। এর পরে যদি অভিষেকের সঙ্গে দেখা করার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় বেরিয়ে যায়, তা হলে কী হবে?’’

গত ১০ জানুয়ারি রটে গিয়েছিল, হিরণ এবং উত্তরবঙ্গের এক বিজেপি বিধায়ক ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেকের দফতরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু বিজেপির তরফে দাবি করা হয়, ওই দিন মধ্যপ্রদেশের ইন্দৌরে একটি ‘বিজনেস সামিট’-এ যোগ দিতে গিয়েছিলেন বিরণ। রাতে একটি টুইট করে ইন্দৌরে নিজের উপস্থিতি জানান দেন হিরণ। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব তখনই দাবি করেছিলেন, অভিষেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরেই মধ্যপ্রদেশে গিয়েছেন তিনি। কিছু দিনের মধ্যে হিরণ যোগ দেবেন তৃণমূলে।

ওই ঘটনার ১০ দিন পর শুক্রবার অভিষেকের দফতরে হিরণের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অজিত মাইতির ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফের তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেন, বিজেপি ছেড়ে হিরণের তৃণমূলের ফেরা এখন সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূলের সেই দাবি নস্যাৎ করে জানিয়ে দেন, পুরোনো ছবি দিয়ে তৃণমূল বিজেপির মধ্যে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে।

এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে একটি পুরোনো ভিডিয়ো নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন হিরণ। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘একটি পুরনো ভিডিয়ো, আজকে পোস্ট করলাম।’’ ওই ভিডিয়োটিতে তাঁকে জোরালো ভাবে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে হিরণ বলছেন, ‘‘এত জোরে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিন, যাতে নবান্নের ১৪ তলা শুনতে পায়!’’ কিন্তু হিরণ নিজেই বলেছেন, ভিডিয়োটি ‘পুরনো’।

অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূল যুব কংগ্রেসে হিরণকে রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। খড়্গপুর সদর আসন থেকে তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকারকে হারিয়ে বিধায়ক হন হিরণ। ২০২২ সালের পুর নির্বাচনেও বিজেপির টিকিটে খড়্গপুর পুরসভায় ২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়ে কাউন্সিলর হয়েছেন হিরণ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement