(বাঁ দিক থেকে ) দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
আগামী ৯ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার আলিপুর জেল মিউজিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আয়োজিত বিজয় সম্মেলনীতে বিরোধী শিবিরের কয়েক জন নেতাকেও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের তালিকায় এ বারের বিজয়া সম্মিলনীতে আমন্ত্রণ যাচ্ছে রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এবং বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের কাছে। তবে শনিবার পর্যন্ত ওই তালিকায় নেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম।
তবে রাজ্য সরকার সূত্রের খবর, প্রতি বারেই প্রধান বিরোধী দলের প্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী সৌজন্য দেখিয়ে বরাবরই সেটা করেন। কিন্তু কোনও বছরই পাল্টা সৌজন্য দেখিয়ে তাঁরা আসেন না। এ বারেও বর্তমান সভাপতি হিসেবে সুকান্ত, প্রাক্তন সভাপতি হিসেবে দিলীপ এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে বিমান বসুকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তবে কংগ্রেসের কোনও নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। বিরোধী দলনেতাকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না, তার জবাবে এক সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, এটি কোনও ‘পরিষদীয় কর্মসূচি’ নয়। তা-ই বিরোধী দলনেতাকে আমন্ত্রণ জানানোর অবকাশ নেই।
প্রসঙ্গত, প্রতি বার মুখ্যমন্ত্রীর বিজয়া সম্মিলনীতে শিল্পপতি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের খ্যাতনামীরা থাকেন। তবে শিল্পপতিদের আমন্ত্রণেই বেশি জোর দেওয়া হয়। কারণ, ওই অনুষ্ঠানেই তার অব্যবহিত পরে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের নান্দীমুখ হয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শনিবার থেকে নিগমের প্রতিনিধিরা আমন্ত্রণপত্র পৌঁছনোর কাজ শুরু করবেন।
তবে রাজনীতির কারবারিরা আমন্ত্রিতদের তালিকায় শুভেন্দুর না-থাকা নিয়ে বিস্মিত নন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের পর থেকে তাঁর সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের সম্পর্কের ক্রমাবনতি হয়েছে। প্রথমে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং তার পরে গত আড়াই বছরে বিধানসভায় তৃণমূল-বিজেপি পরিষদীয় দলের লড়াইয়ে সেই সম্পর্ক আরও নিম্নগামী হয়েছে। আমন্ত্রণ পেলেও সুকান্ত-দিলীপ যে মুখ্যমন্ত্রীর আহূত বিজয়া সম্মিলনীতে যোগদান করতে আসবেন না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, সুকান্ত-দিলীপ বিজয়া সম্মিলনীতে এলে লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস-সিপিএম ফের ‘সেটিং’ তত্ত্ব নিয়ে সরব হতে পারে। সেই পরিস্থিতি এড়াতেই বিজেপির দুই সাংসদ মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দেবেন না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। বস্তুত, শুভেন্দুকে বিজয়া সম্মিলনীতে আমন্ত্রণ না জানানোর পরেও দিলীপ-সুকান্ত সেখানে গেলে বিজেপি নেতা-কর্মীমহল তো বটেই, শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও ‘ভুল বার্তা’ যেতে পারে। তাই তাঁরা বরাবরের মতোই এই আমন্ত্রণ এড়িয়ে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।