ইলামবাজারে নিহত বিজেপি কর্মী গৌরব সরকারের স্মৃতিতে শহিদ বেদি। ইনসেটে গৌরব সরকার ফাইল চিত্র
অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারিতে তাঁরা খুশি। কিন্তু, বাড়ির ছেলেকে পিটেয়ে মারল যারা, তারা শাস্তি পেলে আরও খুশি হবে বীরভূমের ইলামবাজারের নিহত বিজেপি কর্মী গৌরব সরকারের পরিবার।
গত বছর ২ মে, বিধানসভা নির্বাচনে ভোট গণনার দিন ইলামবাজার থানার গোপালনগর গ্রামে বিজেপি কর্মী গৌরবকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের কয়েক জন স্থানীয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই দিন জয়ের খবর মিলতেই গোপালনগর গ্রামে তৃণমূলের লোকজন বিজয় উল্লাস করছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, সেই সময় গৌরবদের বাড়িতে ভাঙচুর চালান শাসকদলের কিছু কর্মী-সমর্থক। গৌরব ও তাঁর ভাই বাধা দিতে এলে তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই সক্রিয় বিজেপি কর্মী গৌরবের মৃত্যু হয়।
পরিবারের তরফে ইলামবাজার থানায় তৃণমূলের বেশ কয়েক জনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ভোট-পরবর্তী হিংসার মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। তদন্ত নেমে অভিযুক্তদের কয়েক জনকে সিবিআই গ্রেফতার করে। কয়েক জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে। বর্তমানে প্রায় সকলেই জামিনে মুক্ত। তবে এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রতেরও। তাঁর নির্দেশেই এমন ঘটনা ঘটেছিল বলে গৌরবের পরিবারের অভিযোগ। অনুব্রত, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ-সহ তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। ওই খুনের ঘটনায় সম্প্রতি বোলপুর আদালতে ২৮ জনের নামে সিবিআই চার্জশিট দিয়েছে।
গৌরবের ভাই সেতু ওরফে সৌরভ সরকার বলেন, “অনুব্রতর গ্রেফতারিতে আমরা খুশি। তবে, যারা আমার ভাইকে মারল, তাদের ধরলে বেশি খুশি হব।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘গণতন্ত্রে সকলের অধিকার আছে, কে কোন দল করবে।’’ গৌরবের মা জ্যোৎস্না সরকারও বলছেন, ‘‘ওঁর (অনুব্রত) গ্রেফতারিতে আমরা খুশি।’’
ওই সময়ে বীরভূমের মল্লারপুরের কোট গ্রামে মারা যান জাকির হোসেন। বিজেপির দাবি, ভোট পরবর্তী হিংসারই শিকার জাকির। ৮ মে সকালে জাকির ছেলের দোকানের পরিস্থিতি দেখে কামরাঘাট থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। জাকিরের বড় ছেলে গিয়াসউদ্দিন শেখ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে বাবাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তবে প্রথম থেকেই অনুব্রতের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অভিযোগ করেননি কেউ। যদিও অনুব্রত গ্রেফতারের পরে জাকিরের পরিবার খুশি দাবি করেছে। কিন্তু কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
গৌরব-জাকিরদের পরিবার খুশি হলেও অনুব্রতের গ্রেফতারিতে ‘ব্যথিত’ হৃদয় ঘোষ। সেই হৃদয় ঘোষ, যাঁর বাবা সাগর ঘোষকে পাড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগে খুন করে দুষ্কৃতীরা। হৃদয় তখন ছিলেন নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল)। ওই ঘটনার কিছু দিন আগেই প্রকাশ্য সভায় অনুব্রত নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। পুলিশ নির্দলদের রক্ষা করতে এলে বোমা মারার নিদানও দেন তিনি। অনুব্রতর নামও সেই খুনে অভিযুক্তদের তালিকায় ওঠে। সেই সময় হৃদয়ের সঙ্গে অনুব্রতের তীব্র সংঘাত সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েক বছর মামলা চলার পরে অনুব্রতের হাত ধরে পুনরায় তৃণমূলেই ফেরেন হৃদয়। তাঁর মতে, ‘‘এক তরফা বিচার হচ্ছে। সিবিআই উচিত কাজ করছে না। এর জবাব আগামী দিনে মানুষ দেবে।”