বৈঠকে শিবপ্রকাশ, দিলীপরা। ফাইল চিত্র
কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র তদন্তে নেমে পড়েছে সিবিআই। সিবিআই-এর হাতে তদন্তভার দেওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূল সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের তোড়জোড় শুরু করেছে সূত্রের খবর। অন্য দিকে, বিজেপি চাইছে কী ভাবে এই তদন্তের সুবিধাপ্রাপক দলীয় কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো যায়। সোমবারই বেলেঘাটায় বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের বাড়ি যান সিবিআই তদন্তকারীরা। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফল ঘোষণার পরেই খুন হয়েছিলেন অভিজিৎ। একই দিনে দলের হেস্টিংসের দফতরে বৈঠকে বসেছেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। সেখানে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ছাড়াও বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ রয়েছেন। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, এই বৈঠকের অন্যতম বিষয় ‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস’-এরঅভিযোগ নিয়ে আলোচনা। যার লক্ষ্য, কী ভাবে দলের ‘আক্রান্ত’ কর্মীরা সিবিআই তদন্তের সুবিধা পেতে পারেন। এই প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, ‘‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসই বৈঠকের একমাত্র বিষয় এমনটা নয়। অন্য সাংগঠনিক আলোচনাও রয়েছে। তবে আমরা জেলা স্তরে আক্রান্ত কর্মীদের হিসেব করছি। অনেকেই পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারেননি। তাঁদেরও কী ভাবে তদন্তের আওতায় নিয়ে আসা যায় সেটাও ভাবতে হবে।’’
বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিন থেকেই ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র অভিযোগ তুলতে শুরু করে বিজেপি। দলের কার্যকারিণী বৈঠকে স্বাধীনতার পরে বাংলায় এমন সন্ত্রাস হয়নি বলে রাজনৈতিক প্রস্তাবও নেওয়া হয়। এই অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনের বেশ কয়েকটি কর্মসূচিও নেয় বিজেপি। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে সেই সব আন্দোলন বিশেষ দাগ কাটতে পারেনি। অন্য দিকে, আদালতেও লড়াই শুরু করে বিজেপি।
সোমবার বৈঠকের সূচনায় দিলীপ ঘোষ।
গত বৃহস্পতিবারই কলকতা হাই কোর্ট তাদের রায়ে বলেছিল, রাজ্যের ‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে’ খুন, ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টার মতো অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই। আর অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ যেমন ঘর বাড়ি ভাঙচুর, বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার তদন্ত করবে রাজ্যে তিন আইপিএস অফিসারের বিশেষ তদন্তকারী দল। দু’টি তদন্তই হবে সুপ্রিম কোর্টের এক প্রাক্তন বিচারপতির নজরদারিতে।
আদালতের রায়ের পরে বিজেপি এটাকে দলীয় জয় বলেই দাবি করেছিল। একই সঙ্গে দলের সিদ্ধান্ত ছিল, এই রায় নিয়ে কোনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হবে না। বিজেপি সূত্রে খবর, এখন ঠিক হয়েছে যে সব কর্মীরা আক্রান্ত বা ঘরছাড়া হয়েও পুলিশের কাছে ভয়ে বা অন্য কারণে অভিযোগ করতে পারেননি তাঁরাও যেন তদন্তের সুবিধা পান। বিজেপি মনে করছে, সিবিআই তদন্ত শেষ হলে যে সব কর্মীরা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের ক্ষতিপূরণ মিলতে পারে। সেই রকম কর্মীর সংখ্যা যাতে বাড়ে তার উদ্যোগও নিতে চাইছে বিজেপি।
সোমবার দলের তিনটি সাংগঠনিক জেলা ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্বের নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। সোমবার সকালেই দু’দিনের উত্তরবঙ্গ সফর সেরে কলকাতায় ফিরেছেন দিলীপ। এই সফরেও তিনটি জেলার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। জানা গিয়েছে, সেখানেও ‘আক্রান্ত’ কর্মীদের হিসেব নিকেশ করা হয়েছে। বিজেপি সূত্রে খবর, আগামী কয়েকদিনে কলকাতা সংলগ্ন জেলাগুলির সঙ্গে সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসবেন রাজ্য নেতৃত্ব।