Suvendu Adhikari

অভিষেক-পুত্রের বিষয়ে কেন তাঁকে নোটিস, পাল্টা ব্যাখ্যা চেয়ে শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনে শুভেন্দু-পত্র

শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক মহিলা। জানিয়েছিলেন, একটি শিশুর উপর রাজনৈতিক আক্রমণ মেনে নিতে পারছেন না তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২২ ১২:৪৪
Share:

বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী গত ১৩ নভেম্বর দু’টি টুইট করেছিলেন। তা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। ফাইল চিত্র।

রাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন শিশু অধিকার লঙ্ঘনের নোটিস পাঠিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীকে। কিন্তু সেই নোটিস তাঁকে কেন পাঠানো হল, সেটাই বুঝতে পারছেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। কমিশনকে দেওয়া জবাবে তাঁর আইনজীবী সেই বিভ্রান্তির কথা জানিয়েছেন। পাল্টা তিনি লিখেছেন, ‘‘ওই নোটিসের বক্তব্য এতটাই ভিত্তিহীন, যে আমার মক্কেল কী ভাবে তার জবাব দেবেন, তা বুঝেই উঠতে পারছেন না!’’

Advertisement

ই-মেলে শুভেন্দুর কাছে ওই নোটিস গিয়েছিল কমিশনের তরফে। যা তাঁর ই-মেলের ‘স্প্যাম ফোল্ডারে’ জমা ছিল বলে জানিয়েছেন শুভেন্দুর আইনজীবী। পরে সেই নোটিস খুঁজে বার করে তার জবাব দেওয়া হয়েছে বলে কমিশনকে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী। শুভেন্দুও তাঁর আইনজীবীর জবাবি চিঠির একটি ‘স্ক্রিনশট’ শেয়ার করেছেন তাঁর টুইটারে। শুভেন্দু সেখানে আরও এক বার জানিয়েছেন, কমিশনের নোটিসের কোন কোন বিষয়গুলি একেবারেই বোঝা যাচ্ছে না। শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘গত ১৮ নভেম্বর আমাকে পাঠানো পশ্চিমবঙ্গের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের নোটিসের জবাব দিয়েছেন আমার আইনজীবী। প্রথমত, যে অভিযোগ আনা হয়ছে, তার পুরোটাই ভিত্তিহীন। দ্বিতীয়ত, কমিশনকে বলতে হবে ‘কয়লা ভাইপো’ বলতে তারা কাকে বুঝেছে। তৃতীয়ত, কমিশন কী করে বুঝল, ‘কয়লা ভাইপো’র পুত্র একজন নাবালক।’’

ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সোমবার তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন ‘‘কাকে বলছে, তা যদি ভাব সম্প্রসারণ করে বোঝাতে হয়, তা হলে ওর কথা বলার কী দরকার! ক্ষমতা থাকলে নাম বলবে আর ক্ষমতা না থাকলে ভুলভাল বকাটা বন্ধ করবে! ও টুইট করে দিক, আমি ভুল বলেছিলাম। ওই হোটেলে কোনও জন্মদিনই হয়নি।’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, গত ১৩ নভেম্বর শুভেন্দুর করা দু’টি টুইট থেকে এই সাম্প্রতিক বিতর্কের শুরু। ধারাবাহিক দু’টি টুইটের প্রথমটিতে কলকাতার একটি বিলাসবহুল হোটেলের নাম করে শুভেন্দু লিখেছিলেন, সেখানে ‘‘জমজমাট উদযাপন হচ্ছে। ‘কয়লা ভাইপো’র ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছে। ৫০০ পুলিশ, বম্ব স্কোয়াড, গোয়েন্দাকুকুর বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে অনুষ্ঠানস্থলে। আর দরজার ফ্রেমে বসেছে মেটাল ডিটেক্টর। রাখা হয়েছে হাতে ধরা মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থাও।’’

দ্বিতীয় টুইটে ছিল ওই টুইটেরই পরের অংশ। শুভেন্দু লেখেন, ‘‘এই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করার জন্য কোনও সরকারি নির্দেশ আসেনি। ‘মমতা পুলিশ’ অফিসার জামালকে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লেডি কিমের পরিবার উত্তর কোরিয়ার আসল কিম জং উনের পদক্ষেপ অনুসরণ করে চলছে। বস্তুত কখনও-সখনও বিলাস এবং দেখনদারিতে তাঁকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’’

শুভেন্দু দু’টি টুইটে কারও নাম না নিলেও তৃণমূল অভিযোগ করে, বিরোধী দলনেতা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করেই ওই আক্রমণ করেছিলেন। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘শুভেন্দু ‘অভিষেক ফোবিয়া’য় ভুগছেন। কিন্তু তাঁর নাম নিয়ে আক্রমণ করার সাহস নেই। তাই আকারে-ইঙ্গিতে বোঝাচ্ছেন।’’

শুভেন্দু অবশ্য বরাবরই অভিষেককে ‘তোলাবাজ ভাইপো’ বলে অভিহিত করেছেন। বস্তুত, এ ব্যাপারে তৃণমূল যখন এর আগে তাঁকে নাম করে আক্রমণ করার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল, তখন শুভেন্দু অভিষেকের নাম করেও আক্রমণ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন ‘তোলাবাজ ভাইপো’ বলতে তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেককেই বোঝাতে চান। পরবর্তী কালে বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বহু বার ‘ভাইপো’ শব্দটি ব্যবহার করে তৃণমূলের দিকে আক্রমণ শানিয়েছেন শুভেন্দু। যেমন তাঁর ১৩ নভেম্বরের টুইটে ‘মমতা পুলিশ’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন শুভেন্দু। কিন্তু তাঁর আইনজীবী কমিশনকে যা জানিয়েছেন, তা-ও অসত্য নয়। শুভেন্দু তাঁর টুইটে নির্দিষ্ট করে কারও নাম করেননি।

শুভেন্দুর ওই জোড়া টুইটের পরেই জোড়া অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের মামলা দায়ের করেছিলেন শিল্পা দাস নামে এক মহিলা। কমিশনকে তিনি জানান, একজন ‘মা’ হিসাবে তিনি একজন শিশুর উপর রাজনৈতিক আক্রমণ মেনে নিতে পারছেন না। অন্য দিকে, পকসো আইনে একটি এফআইআরও দায়ের করা হয় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। তাতে বলা হয়েছিল, একটি শিশুকে এই ধরনের আক্রমণের জের সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হতে পারে। কিন্তু সে কথা না ভেবেই দায়িত্বজ্ঞানহীন আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা।

শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের ওই নোটিসের জবাবেই শুভেন্দুর আইনজীবী লিখেছেন, বার বার ওই টুইটটি পড়ার পরেও তাতে কোথায় একজন শিশুকে আক্রমণ করা হয়েছে, তা বুঝতে পারেননি তাঁরা। টুইটে ‘কয়লা ভাইপো’র ছেলের জন্মদিন পালনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘কয়লা ভাইপো’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, আর তাঁর ছেলে যে একজন নাবালক তা কী করে বুঝল কমিশন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement