মঙ্গলবার দিনভর কালী নিয়ে ব্যস্ত বঙ্গ বিজেপি। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
মঙ্গলবার সকাল। বাইপাসের ধারে বিলাসবহুল হোটেলে এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে কালীমূর্তি উপহার দিলেন বিজেপির সাংসদ, বিধায়করা। দুপুরে হাওড়ার পাঁচলায় কালীমন্দিরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। বিকেলে কালীভক্তদের দু’পাশে নিয়ে রাজভবনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, হাতে কালীর ছবি। উত্তর ভারতে রাম-রাজনীতিতে সফল বিজেপি শাক্তভূমি বাংলায় কালীকে সামনে নিয়ে আসছে গত কয়েক দিন ধরেই। মঙ্গলবার সেটাই যেন আরও সংগঠিত কর্মসূচির রূপ পেল কলকাতায় এবং পাশের জেলা হাওড়ায়।
এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে কালীর ছবি তুলে দিচ্ছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ফেসবুক থেকে
আপাত ভাবে বিজেপির এই কালী-রাজনীতির অভিমুখ কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র। সেখানকারই নির্বাচিত সাংসদ তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। সম্প্রতি যাঁর কালী সংক্রান্ত মন্তব্যে ভক্তদের ভাবাবেগ আহত হওয়ার অভিযোগে পথে নেমেছে গেরুয়া শিবির। দেশের বিভিন্ন থানায় মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। মহুয়াকে আক্রমণ তীব্র করছেন বিজেপির নেতারা। তাতে যোগ দিচ্ছেন দিল্লির নেতৃত্বও। সরাসরি মহুয়া-বিতর্কে কিছু না বললেও, রবিবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী রামকৃষ্ণ মিশনের একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে করা বক্তৃতায় দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীকে নিয়ে যেমন বলেছেন, তেমনই মনে করিয়েছেন রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের কালীভক্তি এবং বাংলার কালীপুজোর মাহাত্ম্য। নরেন্দ্র মোদীর এই বক্তব্যকে তুলে এনে তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মহুয়ার দিকে তির ছুঁড়েছিলেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান এবং বাংলার দায়িত্বে থাকা অমিত মালবীয়। মহুয়া অবশ্য পিছু হটেননি। চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন বিজেপিকে। টুইটারে লিখেছেন, যা বলেছেন তা ভুল প্রমাণ করে দেখাক বিজেপি। একই সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ‘অজ্ঞতা’ নিয়েও খোঁচা দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ।
মহুয়ার প্রকাশ্য বিতর্কের চ্যালেঞ্জ বঙ্গ বিজেপি নেবে কি না, নিলেও মহুয়াকে তাঁর দল অংশ নিতে দেবে কি না ভবিষ্যতের বিষয়। কিন্তু কালী-বিতর্ককে যে বিজেপি সহজে থিতিয়ে দিতে চায় না, তা মঙ্গলবার আরও স্পষ্ট হল। সকালে এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে কালীঘাটের প্রতিমার বাঁধানো ছবি উপহার দিয়ে যার শুরু। শেষটা রাজভবনে। যেখানে তিনটি বাস ভর্তি করে কালীভক্তদের নিয়ে এসে, কালীমূর্তির ছবি গলায় ঝুলিয়ে পৌঁছে যান শুভেন্দু। মাঝে দুপুরে, হাওড়ার পাঁচলায় একটি কালী মন্দিরে পুজো দিতে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি। প্রসাদও গ্রহণ করেন।
হাওড়ার পাঁচলার কালীমন্দিরে পুজো দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। নিজস্ব চিত্র।
আপাত ভাবে বিজেপির আক্রমণের কেন্দ্রে মহুয়া হলেও, লক্ষ্য আরও বড়। তৃণমূল প্রথম থেকে মহুয়ার মন্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও, এই বিতর্ক থেকে তৃণমূলকে বাদ দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির। নিশানায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। স্মৃতি প্রশ্ন তুলেছেন, “ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন মহুয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করবেন না?” তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি, অতিমারিজনিত সঙ্কট থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই ধর্ম নিয়ে নাটক করছে বিজেপি। তাই রান্নার গ্যাসের দাম সামান্য বৃদ্ধিতে যে স্মৃতি সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় বসতেন, আজ সেই সিলিন্ডার হাজার পেরিয়ে গেলেও তিনি নির্বিকার। বাঙালি বিজেপির চালাকি ধরে ফেলেছে।’’ কুণালের তোপ, ‘‘দিলীপ ঘোষ যখন মা দুর্গার পিতৃপরিচয় নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেন, তখন বিজেপির নেতানেত্রীরা কী করছিলেন?’’
কালীভক্তদের নিয়ে রাজভবনে শুভেন্দু, হাতে কালীর ছবি। নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার শুভেন্দুদের সঙ্গে দেখা করার পর কালী বিতর্কে ঢুকে পড়লেন রাজ্যপালও। রাজভবনে শুভেন্দুর সঙ্গে আসা কালীভক্তদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘মা কালী শুধু বাংলারই আরাধ্য দেবতা নন, তিনি সারা দেশের কাছে পূজিত একজন দেবী। ভারতের মানুষের সঙ্গে দেবী কালীর আত্মার সম্পর্ক। তাঁর অবমাননার অভিযোগ নিয়ে আপনারা আমার কাছে এসেছেন। আপনারা যে কত বেদনা থেকে আমার কাছে এসেছেন তা আমি বুঝতে পারছি।’’ ধনখড় আরও বলেন, ‘‘আমি জানি আপনারা অনেক সহ্য করেছেন। এই সহ্যশক্তি দেন মা কালী। আমি আপনাদের সব দাবি সমর্থন করছি।’’