কাঁথিতে রোড শো-য়ে শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে রয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদার, সৌমিত্র খাঁ। —নিজস্ব চিত্র
আগামী বিধানসভা ভোটে অবিভক্ত মেদিনীপুরের ৩৫টি আসনই দখল করবেন বলে দাবি করলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার কাঁথির জনসভায় শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘এখানে দাঁড়িয়ে বলছি, আমি শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষ মিলে অবিভক্ত মেদিনীপুরের ৩৫টি আসনই দখল করব।’’ অর্থাৎ, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের ৩৫টি আসনই বিজেপি দখল করবে। পাশাপাশিই শুভেন্দু জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামে আগামী ৭ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যারে সভার পরদিনই তিনি নন্দীগ্রাম সভা করবেন। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘৭ তারিখে নন্দীগ্রামে আসুন। ভাষণ দিন। আমি জানি আমার বিরুদ্ধে আপনি কী বলবেন। ৮ তারিখ আমি সভা করব। আপনার সব কথার উত্তর দেব।’’
প্রসঙ্গত, বুধবারই শুভেন্দুর ‘গড়’ বলে পরিচিত কাঁথিতে মিছিল এবং সভা করেছিলেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মতো ‘ওজনদার’ নেতারা। সেখানে শুভেন্দুকে ‘ধান্দাবাজ’ এবং ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছিলেন তাঁরা। তার উত্তরেই বৃহস্পতিবার শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই সিদ্ধান্তই সঠিক। গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা বলে। এখানে দাঁড়িয়ে বলছি, আমি শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষ মিলে অবিভক্ত মেদিনীপুরের ৩৫টি আসনই দখল করব।’’ শুভেন্দুর কথায়, ‘‘আমি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে বলেছি, ৮ তারিখ নন্দীগ্রামে সভা করতে চাই। উনি বলেছেন ‘গো অ্যাহেড’। আমি নিজে সেই সভার আয়োজন করছি।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বক্তৃতায় ‘অমিতদা’ বলেও উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু। বলেছেন, ‘‘অমিতদা বলেছেন, ২৩০ আসনে জিততে হবে। আমি বলছি, ৩৫টা আসন মেদিনীপুর থেকেই দেব!’’
বৃহস্পতিবারের সভায় মমতাকে উদ্দেশ্য করে শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘দিদিমণি, এবারও আপনি এখানে দ্বিতীয় হবেন। প্রথম হবে বিজেপি। আমরা এখানে পদ্ম ফুটিয়ে ঘুমোতে যাব।’’ এর পর শুভেন্দু সেই কথাটিই আবার বলেছেন, যা তিনি তৃণমূল ছাড়ার আগে বিভিন্ন ‘অরাজনৈতিক কর্মসূচি’-তে বলতেন— ‘‘আমি গ্রামের ছেলে পান্তা খাওয়া ছেলে। এই গ্রামের ছেলের সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার ৪-৫টা লোকের লড়াই। এটা ট্রেলার দেখছেন। সিনেমাটা বাকি রয়েছে।’’ শুভেন্দু জানিয়েছেন, তিনি জঙ্গলমহলে লড়াই করা লোক। নন্দীগ্রামে আন্দোলন করা লোক। তাঁর কথায় “আমাকে ভয় দেখাবেন না।’’
আরও পড়ুন: অধীরকে জোটের ‘মুখ্যমন্ত্রী মুখ’ করার দাবি, আসরে কংগ্রেসের একাংশ
শুভেন্দুর অভিযোগ, পুলিশ দিয়ে তাঁর কর্মসূচি বানচাল করার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, সৌগত একসময় দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের হয়ে মমতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে প্রথমত সৌগত বলেছেন, ‘‘এই পুলিশই তো ওঁকে গত সাড়ে চার বছ নিরাপত্তা দিয়েছে! ওঁর নাকি জীবনের আশঙ্কা ছিল! পুলিশ আইন মেনে কাজ করে।’’ দ্বিতীয়ত, তাঁর আরও কথা, ‘‘বিজেপি-র সঙ্গে ছ’বছর বোঝাপড়া করে, সাড়ে চার বছর মন্ত্রী থেকে নির্বাচনের আগে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিজেপি-তে চলে যাইনি। তখন একটা সময়ে আমার একটা কথা মনে হয়েছিল। লড়াই করেছিলাম। হেরে গিয়েছিলাম। তার পর মমতার সঙ্গে কথা বলে তাঁর অনুমতি নিয়েই রীতিমতো কনভেনশন ডেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। এর মধ্যে তো কোনও নীতিহীনতা নেই!’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোটে সিলমোহর সনিয়ার, উজ্জীবিত দুই শিবিরই