রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিল বিজেপি।
রাজ্য সরকার এবং বাংলার শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিল বিজেপি। বুধবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে জমা দিয়ে এসেছেন ওই চিঠি। ১৯ জন তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীর সম্পত্তি মামলায় যে সম্প্রতি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে যুক্ত করেছে কলকাতা হাই কোর্ট, চিঠিতে সে কথা জানিয়েছেন সুকান্ত। পাশাপাশি, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে জেলা তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের কথাও উল্লেখ করেছেন। তৃণমূলের যদিও বক্তব্য, সুযোগ পেয়ে সকলেই দলকে অসম্মান করছে।
রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে সুকান্ত জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। নির্বাচন পরিস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও শাসকদলের বিধায়কদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে বাংলার গরিব মানুষকে বাঁচাতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। সুকান্ত তাঁর চিঠিতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে বিপুল টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি, অনুব্রত যে বার বার সিবিআই তলব করা সত্ত্বেও এড়িয়ে যাচ্ছেন তার উল্লেখও করেছেন তিনি। চিঠিতে মমতা ছাড়াও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌকত মোল্লা, পরেশ অধিকারীদের নাম উল্লেখ করেছেন। মমতা ছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধে যে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করছে তারও উল্লেখ করেছেন সুকান্ত।
২০১৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন জনৈক বিপ্লব চৌধুরী। আদালতের কাছে তিনি আর্জি জানান, বাংলার নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি কী ভাবে বাড়ছে, তা ইডি খতিয়ে দেখুক। বিপ্লবের আইনজীবী শামিম আহমেদ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে ওই আর্জি জানান। হাই কোর্টে তিনি ১৯ জন নেতা-মন্ত্রীর একটি তালিকা-সহ তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব দিয়ে বলেন, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। তিনি আর্জি জানান, পাঁচ বছরে এঁদের সম্পত্তি কী ভাবে এত বাড়ল, তা খতিয়ে দেখুক ইডি। এর প্রেক্ষিতে গত সোমবার, ৮ অগস্ট ইডিকে ওই মামলায় একটি পার্টি করার নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বেঞ্চ। তার আগে, গত জুলাইতে, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে ইডি। তাদের দাবি, ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার একাধিক ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। অর্পিতাকেও গ্রেফতার করেছে ইডি।
সুকান্ত এই দুই ঘটনারই উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপতিকে লেখা তাঁর চিঠিতে। শুধু দুর্নীতির কথাই নয়, রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে সুকান্ত জানিয়েছেন, রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে দু’জনের মধ্যে লড়াই চলছে। একইসঙ্গে সদ্য ভগবানগোলায় তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিশ আলি দলীয় কর্মীদের হাতে হেনস্থার বিষয়টিরও উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে সম্প্রতি রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে যে মুখ্যমন্ত্রীর নাম বিল হিসাবে পাশ হয়েছে বিধানসভায়, সে কথাও রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন তিনি।
পার্থ গ্রেফতার হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী যদিও মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেন। এমনকি, তৃণমূলও দলের মহাসচিব-সহ একাধিক দায়িত্ব থেকে পার্থকে সরিয়ে দেয়। বুধবার রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিরোধীদের তলা বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানিয়েছেন, সুযোগ পেয়ে সকলেই তাঁদের অসম্মান করছেন। তিনি বলেন, ‘‘সুযোগ পেয়েছেন, সবাই অপমান করছেন। রোজগার বাড়ানো কোনও অন্যায় নয়। সম্পত্তি কেনাও কোনও অন্যায় নয়। পার্থদা যা করেছেন, তাতে আমরা সবাই লজ্জিত। তার মানে এই নয়, তৃণমূলের সবাই চোর।’’