বাংলার ১৯ নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি কী ভাবে বাড়ছে, তা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) খতিয়ে দেখুক, এমনই আর্জি জানানো হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। সেই মামলায় সোমবার ইডিকেও জুড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই আর্জি জানান আইনজীবী শামিম আহমেদ। হাই কোর্টে তিনি ১৯ জন নেতা-মন্ত্রীর একটি তালিকা-সহ তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব দিয়ে বলেন, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি বিপুল পরিমাণে বেড়েছে।
যাঁদের নাম রয়েছে তাঁরা সকলেই ২০১১ ও ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছেন। সেই সময়ে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় নিজেদের সম্পত্তি ও দায়ের হিসাব জমা দেন। সেখান থেকেই দেখা যাচ্ছে কার সম্পদ কতটা বেড়েছে।
ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের সম্পত্তির হিসাব, শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে ফৌজদারি মামলার বিস্তারিত বিবরণ রাখে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস। ‘মাইনেতা.ইনফো’ ওয়েবসাইটে সেই সব বিবরণের সঙ্গে থাকে সংশ্লিষ্ট নেতা ভোটের জন্য কোন খাতে কত টাকা খরচ করেছেন।
কলকাতা বন্দরের বিধায়ক ফিরহাদ হাকিমের সম্পত্তি ২০১১ সালে ছিল ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৮ টাকা। দেনা ছিল ৫৪ লাখ ১ হাজার টাকা।
পাঁচ বছর পরে ফিরহাদের সম্পত্তি হয় ৬ কোটি ৫ লাখ ১৬ হাজার ২৬১ টাকা। দেনা ছিল ৫৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
দমদমের তৃণমূল বিধায়ক ব্রাত্য বসুর ২০১১ সালে মোট সম্পত্তি ছিল ৭৩ লাখ ৯ হাজার ৮০১ টাকা। দেনা ছিল ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৬ টাকা।
পাঁচ বছর পরে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে ব্রাত্যর মোট সম্পত্তি ছিল ১ কোটি ৯৫ লক্ষ ২৯ হাজার ১৭৭ টাকা। কোনও দেনা ছিল না।
আসানসোল উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক মলয় ঘটকের ২০১১ সালে মোট সম্পত্তি ছিল ৬১ লাখ ৬৪ হাজার ২৯৫ টাকা। দেনা ছিল ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৩১৪ টাকা ২৮ পয়সা।
পাঁচ বছর পরে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে মলয়ের মোট সম্পত্তি ছিল ৮৮ লাখ ৯ হাজার ৫৩৫ টাকা। দেনা ছিল ২২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৩১ টাকা।
প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় ২০১১ সালে বালিগঞ্জ আসনে ভোটে লড়ার সময়ে জানিয়েছিলেন, তাঁর মোট সম্পত্তি ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার ৯৮৮ টাকা।
পাঁচ বছর পরে ২০১৬ সালে প্রয়াত মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর মোট সম্পত্তি ৯৪ লাখ ৭৮ হাজার ৯৮৮ টাকার।
২০১১ সালে হলদিয়া আসন থেকে লড়ার সময়ে তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহা জানিয়েছিলেন, তাঁর মোট সম্পত্তি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৯ টাকার।
২০১৬ সালে শিউলি লড়েন পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর আসন থেকে। তখন সম্পত্তি ছিল ১ কোটি ৮৮ লাখ ৬৬ হাজার ২৪৩ টাকার। দেনা ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ২০১১ সালে জানান, মোট সম্পত্তি ৭ কোটি ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩১৬ টাকা। দেনা নেই।
খড়দহ আসন থেকে ২০১৬ সালেও জেতেন তিনি। তখন জানান, সম্পত্তি ১১ কোটি ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৫৫ টাকা। দেনা নেই।
২০১১ সালে হাবরার বিধায়ক হওয়ার সময়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মোট সম্পত্তি ছিল ৮০ লাখ ২৬ হাজার ৪৪৪ টাকার। দেনা ছিল ৩ লাখ ৬ হাজার ৩৬৩ টাকা।
পাঁচ বছর পরে ২০১৬ সালে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় যে হলফনামা জমা দেন তাতে জানান, মোট সম্পত্তি ১ কোটি ৫১ লাখ ৩ হাজার ৮৭ টাকা।
প্রয়াত সাধন পাণ্ডে ২০১১ সালে জানিয়েছিলেন তাঁর মোট সম্পত্তি ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮৫৬ টাকা। দেনা ছিল না।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময়ে জানান মোট সম্পত্তি ৪ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৯ টাকার। দেনা ছিল না।
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ২০১১ সালে জানান তাঁর মোট সম্পত্তি ৪ কোটি ৭৯ লাখ ২৮ হাজার ১১০ টাকা। দেনা ছিল ৯ লাখ ৮৭১ টাকা।
পাঁচ বছর পরে ২০১৬ সালে শোভন জানান তাঁর মোট সম্পত্তি ৬ কোটি ৭২ লাখ ৫৯ হাজার ৯১২ টাকা। দেনা ছিল না।
এখন খাতায়কলমে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ ২০১১ সালে ভাটপাড়ায় তৃণমূল প্রার্থী হওয়ার সময় জানান তাঁর মোট সম্পত্তি ৩৬ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৯৫ টাকা। দেনা ছিল ১৭ লাখ ৩৩ হাজার ০৫৯ টাকা।
পাঁচ বছর পরে ২০১৬ সালে জানান তাঁর সম্পত্তি ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৭ টাকা। দেনা ছিল ১১ লাখ টাকা।
বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বারুইপুর পশ্চিমের বিধায়ক। ২০১১ সালে হলফনামায় তিনি জানান, তাঁর মোট সম্পত্তি ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২০ টাকার।
বারুইপুর পশ্চিম আসন থেকে ২০১৬ সালে লড়ার সময় বিমান জানান, তাঁর মোট সম্পত্তি ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫৭৭ টাকা।
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি থেকে ২০১১ সালে বিধায়ক হন গৌতম দেব। তখন সম্পত্তির পরিমাণ জানিয়েছিলেন ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪৩ টাকা। দেনা ৭ লাখ ২ হাজার টাকা।
একই আসন থেকে ২০১৬ সালে ভোটে লড়ার সময়ে গৌতম জানান তাঁর মোট সম্পত্তি ১ কোটি ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ২৫৪ টাকা। দেনা নেই।
তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদ ২০১১ সালে জানান তাঁর মোট সম্পত্তি ৭ কোটি ৯ লাখ ৬১ হাজার ৬১৩ টাকা। দেনা ৪১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩০ টাকা।
পাঁচ বছর পরে ২০১৬ সালে তিনি জানান, মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০ কোটি ১০ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩৩ টাকা। দেনা ৫১ লাখ টাকা।
এন্টালির তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে হলফনামায় জানান তাঁর মোট সম্পত্তি ২ কোটি ৫৫ লাখ ৮৩ হাজার ৮৪ টাকা।
স্বর্ণকমল সাহা ২০১৬ সালে জানান, তাঁর মোট সম্পত্তি ৬ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩৫ টাকা। দেনা নেই।
২০১১ সালে তৃণমূল বিধায়ক অরূপ রায় জানান, তাঁর মোট সম্পত্তি ১ কোটি ১৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
২০১৬ সালে হাওড়া মধ্য আসনের প্রার্থী হয়ে অরূপ জানান, তাঁর মোট সম্পত্তি ২ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৪৮২ টাকা। দেনা ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৯ টাকা।
কসবা আসনে ২০১১ সালে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে জাভেদ আহমেদ খান জানান, তাঁর মোট সম্পত্তি ২ কোটি ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৩৯৭ টাকার। দেনা নেই।
২০১৬ সালে জাভেদ খান জানান, তাঁর মোট সম্পত্তি ১৭ কোটি ২৯ লাখ ৮১ হাজার ৮৬৯ টাকা। দেনা ৩০ কোটি ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬০ টাকা।
২০১১ সালে ক্যানিং পূর্বের সিপিএম প্রার্থী ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। তখন মোট সম্পত্তি জানিয়েছিলেন, ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৩৭৩ টাকা।
ভাঙড় আসন থেকে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে লড়ার সময়ে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা জানান, তাঁর মোট সম্পত্তি ১ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৫ টাকা। দেনা নেই।
২০১১ সালে ডোমজুড়ে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর মোট সম্পত্তি ৫৫ লাখ ১৮ হাজার ৫২৬ টাকা।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব ২০১৬ সালে তাঁর সম্পত্তির মোট পরিমাণ জানান, ৭৮ লাখ ২৮ হাজার ২০৮ টাকার।
রাজারহাট নিউটাউন আসন থেকে ২০১১ সালে প্রার্থী হওয়ার সময়ে সব্যসাচী দত্ত তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ জানান, ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪১০ টাকার। দেনা নেই।
২০১৬ সালে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে সব্যসাচী হলফনামায় বলেন, তাঁর মোট সম্পত্তি ২ কোটি ৩৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪ টাকা। মোট দেনা ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৮৫ টাকা।