Sukanta Majumdar

বাংলা ভাগের কোনও খবর নেই: সুকান্ত

এত দিন পর্যন্ত বিজেপির রাজ্য নেতারা কেউই সরাসরি বাংলা ভাগকে সমর্থন করেননি। কিন্তু সুকান্ত বা দিলীপ ঘোষেরা বার বার জানিয়েছেন, তাঁরা নীতিগত ভাবে বঙ্গভঙ্গ না চাইলেও জনগণের আবেগকে অস্বীকার করা যায় না।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২২ ০৬:০৯
Share:

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে বৈঠক করে বার হয়ে গ্রেটার কোচবিহারের নেতা অনন্ত মহারাজ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা ‘সময়ের অপেক্ষা’। সেই সময়ে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নিশীথ তা অস্বীকারও করেননি। বরং জবাব এড়িয়ে যান। শুক্রবারের এই ঘটনার ঠিক ২৪ ঘণ্টা পরে দার্জিলিঙে বসে এমনই এক প্রশ্নের জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার উল্টে কৌশলে ‘বঙ্গভঙ্গের চক্রান্তের’ দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তৃণমূলের উপরে। তিনি বলেন, ‘‘এমন কিছু কেন্দ্র জানায়নি। মনে হচ্ছে, তৃণমূলের পরিকল্পনা।’’ যা শোনার পরে দার্জিলিং সমতলের তৃণমূল নেতা তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘রাজ্য ভাগের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্পষ্ট করে ‘না’ বলছেন না। উল্টো দিকে, সুকান্ত বলছেন, এ নিয়ে কেন্দ্র কিছু জানায়নি। বিজেপি দলটায় রাজ্যে কে নেতা, কে জানে!’’

Advertisement

এ দিন দার্জিলিং পাহাড়ে বিজেপির সভায় যোগ দেন সুকান্ত। পরে সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানেই সুকান্ত জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তাঁর দলকে বাংলা ভাগ নিয়ে কোনও ‘সূচনা’ এখনও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি কল্পিতও (হাইপোথিটিক্যাল) হতে পারে বলে অভিমত তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘এমন কিছু কেন্দ্র জানায়নি। মনে হচ্ছে, তৃণমূলের পরিকল্পনা।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের অবস্থা ভাল নয়। তাই উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের আবেগ তুলে দক্ষিণবঙ্গকে কাছে টানার পরিকল্পনা বলেই মনে হচ্ছে।’’

এত দিন পর্যন্ত বিজেপির রাজ্য নেতারা কেউই সরাসরি বাংলা ভাগকে সমর্থন করেননি। কিন্তু সুকান্ত বা দিলীপ ঘোষেরা বার বার জানিয়েছেন, তাঁরা নীতিগত ভাবে বঙ্গভঙ্গ না চাইলেও জনগণের আবেগকে অস্বীকার করা যায় না। সেই সুকান্ত হঠাৎ এ কথা বললেন কেন? বিশেষ করে শুক্রবার যেখানে নিশীথের সঙ্গে বৈঠকের পরে এই বিষয়ে অনন্ত মহারাজ বলেছেন, ‘সময়ের অপেক্ষা’? এবং সেখানে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নিশীথ বাংলা ভাগের দাবিকে খারিজও করেননি।

Advertisement

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন চলেছে। সেখানে আলাদা উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি সামনে এসেছে ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পরে। এই দুই দাবির মধ্যে দ্বন্দ্বও রয়েছে। অনন্ত মহারাজদের দাবি মতো গোটা উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হলে পাহাড়ের দুই জেলাই তার অন্তর্গত হবে। প্রশ্ন উঠেছে, পাহাড়ের মানুষ কি সেটা মেনে নেবেন? সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সে জন্য আলাদা উত্তরবঙ্গের জন্য ‘নীতিগত সমর্থনের’ কথা বলতে চাননি সুকান্ত। একই সঙ্গে পাহাড় সমস্যা সমাধান নিয়েও তিনি বলেন, ‘‘ছোট বিষয় নয়। সময় লাগবে। পাহাড়, রাজ্য ও দেশের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই কাজ হবে। কেন্দ্রীয় সরকার এই ‘চিকেন নেক’-এর উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে।’’ অনন্ত মহারাজের বাংলা ভাগের দাবিকে এ দিন কঠোর সমালোচনা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য ভাগের দাবি যাঁরা তোলেন, তাঁদের গ্রেফতার করা উচিত। সে তিনি মহারাজই হোন বা মৌলবী।’’

তৃণমূল সুকান্তের এই বক্তব্যকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন, ‘‘অনেক রকম চক্রান্ত। কখনও বাংলা ভাগ করে দিচ্ছে! কখনও গুরুংকে দিয়ে গোর্খাল্যান্ড করা হচ্ছে! যখন উন্নয়ন হচ্ছে, তখন গোলমাল লাগিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা। কী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জব্দ করা যায়, তারই চেষ্টা।’’ গৌতম দেবের কথায়, ‘‘বিজেপি ভোটে ফায়দার জন্য এ সব করছে। মানুষ যোগ্য জবাব দেবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement