বিজেপির কর্মসূচিতে ত্রিপুরা সফরে যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে মিঠুন ‘এলিতেলি গঙ্গারাম’ বলে কুণালকে কটাক্ষ করেন। ফাইল চিত্র।
দেবের ‘প্রজাপতি’ সিনেমা ঘিরে বিতর্ক ব্যক্তিগত আক্রমণে পৌঁছে গেল। মিঠুন চক্রবর্তী বনাম কুণাল ঘোষ। মঙ্গলবার বিজেপির কর্মসূচিতে ত্রিপুরা সফরে যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে মিঠুন ‘এলিতেলি গঙ্গারাম’ বলে কুণালকে কটাক্ষ করেন। তার জবাবে কুণাল অতীতের অনেক ঘটনার কথা তুলে ধরে দাবি করলেন, মিঠুনকে অনেক কারণে তাঁর কাছে আসতে হয়েছিল। তবে মিঠুন যে ভাল অভিনেতা, তারও উল্লেখ করেন কুণাল।
বিতর্কের শুরু অভিজিৎ সেন পরিচালিত ‘প্রজাপতি’ ছবি ঘিরে। বড়দিনে ওই ছবি মুক্তি পেলেও নন্দনে প্রদর্শনের জায়গা পায়নি। এ নিয়ে ছবির প্রধান মুখ তথা সহ-প্রযোজক দেব টুইট করেন, ‘‘এ বার তোমায় মিস্ করব নন্দন। কোনও ব্যাপার নয়, আবার দেখা হবে। গল্প শেষ।’’ পরে নন্দন প্রেক্ষাগৃহ না-পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়। মিঠুন বিজেপি করেন বলেই ‘প্রজাপতি’ ছবিকে আলাদা চোখে দেখা হয়েছে বলে দাবি করে গেরুয়া শিবির। দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘যে হেতু মিঠুন চক্রবর্তী বিজেপিতে আছেন, তাই তাঁকে বয়কটের চেষ্টা হচ্ছে।’’ জবাবে কুণাল বলেছিলেন, ‘‘এই সিনেমায় দেবের অভিনয় দারুণ। বিশেষ করে এই যে বাবা-ছেলের রসায়ন। ‘টনিক’-এ দেব আর পরানবাবু (প্রবীণ অভিনেতা পরান বন্দ্যোপাধ্যায়) ছিলেন। পরানবাবু সুপারহিট। আর এখানে ডুবিয়ে দিয়েছে মিঠুনদা। মিঠুনদাকে ১০ গোল দিয়ে দিয়েছেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে এই জায়গা থেকে ছবিটাকে টানার জন্য হয়তো কোনও বিতর্ক তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি।’’
বিতর্ক আরও বাড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ দেব বলেন, ‘‘কুণালদা আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। তবে একটাই কথা বলব, উনি রাজনৈতিক মুখপাত্র। আমার মনে হয় সিনেমা নিয়ে ওঁর পড়াশোনা নেই। আমি ওঁকে ছোট করে কিছু বলতে চাইছি না। যথেষ্ট সম্মাননীয় এক জন মানুষ। তবে আমি মনে করি, সিনেমাটা আমার উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।’’ কুণাল ফের জবাব দেন। কিন্তু তার পরে পরেই দেব জানান এই বিষয় নিয়ে যাবতীয় ভুল বোঝাবুঝি কেটে গিয়েছে। কুণালের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।
সেই মন্তব্যের জেরে ফের বিতর্ক তৈরি হল মঙ্গলবার। তখন মিঠুন চুপ থাকলেও মঙ্গলবার তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘চেয়েছিলিস তো আমার টিআরপি নামাতে, মরা অব্দি পারবি না।’’ এটা কি তিনি কুণাল সম্পর্কে বললেন? এই প্রশ্নের জবাবে মিঠুন বলেন, ‘‘এলিতেলিদের আমি জবাব দিই না, ও সব গঙ্গারামদের আমি জবাব দিই না।’’
এর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিস্ফোরক কুণাল। দাবি করেন রাজনৈতিক কারণে অনেক বারই মিঠুন তাঁর সাহায্য নিয়েছেন। এমনকি, অভিনয়ের ক্ষেত্রেও। কুণাল বলেন, ‘‘আজ যাঁকে উনি এলিতেলি গঙ্গারাম বলছেন তাঁর সঙ্গে কেমন যোগাযোগ ছিল তিনি তা নিজে ভাল করে জানেন। আমি এখনও বলছি, ওই চরিত্রটায় পরান বন্দ্যোপাধ্যায় ঢের ঢের ভাল অভিনয় করতেন।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মিঠুনদা যে ভাল অভিনেতা তা তো অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু ভাল অভিনেতা মানেই সব ছবি হিট করবে তা তো বলা যায় না। যদি টিআরপি-র কথা উনি বলেন, তবে ক’টা ছবি করেছেন আর ক’টা হিট তার হিসাব করলেই বোঝা যাবে।’’
এর পরে ‘এলিতেলি গঙ্গারাম’ মন্তব্যের জবাবে নানা বিস্ফোরক দাবি করেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘ওঁকে এই এলিতেলি গঙ্গারামের সঙ্গে গিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ঝামেলা মেটাতে হয়েছিল। এর সঙ্গে গিয়েই সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে দূরত্ব মেটাতে হয়েছিল। এর সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েই পদ্মশ্রীর সুপারিশ পাঠাতে হয়েছিল।’’ কুণালের আরও সংযোজন, ‘‘উনি তো নিজেকে সাপ বলেন। সাপের মতোই উনি মরসুমে মরসুমে খোলস বদলান।’’